শেখ হাসিনার মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা আজ

তিনি এই মামলার ৫৪তম এবং সর্বশেষ সাক্ষী। তার জবানবন্দিতে উঠে আসে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহারের তথ্য।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা |সংগৃহীত

গণহত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আজ সোমবার শেষ সাক্ষী মো: আলমগীরকে জেরা করবেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন। এই জেরা অনুষ্ঠিত হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর গত ৩০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন। তিনি এই মামলার ৫৪তম এবং সর্বশেষ সাক্ষী। তার জবানবন্দিতে উঠে আসে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহারের তথ্য। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল আজকের দিনটি জেরা কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করে।

এর আগে, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া আলমগীরের জবানবন্দিতে তার জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়, যেখানে জুলাই-আগস্ট মাসের নৃশংসতার চিত্র ফুটে ওঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে তিনি যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের বিবরণ দেন।

তিনি জানান, ওই সময় ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল। তার জবানবন্দি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং বিবিসি, আল-জাজিরা, আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। মোট ২৫ কার্যদিবসে মামলায় ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলে মামলাটি যুক্তিতর্ক ও রায়ের পর্যায়ে প্রবেশ করবে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন, যাকে পরে আমির হোসেন জেরা করেন। মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন।

বিভিন্ন সাক্ষীর জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এসবের জন্য শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠায়, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠায় এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়। মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার প্রতিবেদন জমা দেন।