ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা বাজারের ড্রেন ও টিউবওয়েলের জায়গা বন্ধ করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। বাজারে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা, সংকোচিত হয়েছে পায়ে চলার পথ। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মাছ-তরকারিসহ কাঁচামাল কিনতে আসা লোকজন।
এ ব্যাপারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাজারের জায়গা দখল মুক্ত করার জন্য বাজার ইজারাদার সাইফুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতারা মাছ মহাল থেকে মরিচ মহাল পর্যন্ত সরকারি শেড ঘরের দুই পাশের রাস্তা ও ড্রেন ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে এবং তাতে দোকান ঘর তৈরি করে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া আদায় করে আসছেন। মাছ বাজার শেড ঘর সংলগ্ন সরকারি টিউবওয়েল সরিয়ে এর উপরও অবৈধ দোকান নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ড্রেন বন্ধ করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, এতে বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি টিউবওয়েলের উপর দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করার বিষয়ে ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এখানে টিউবওয়েল ছিল কিনা জানা নাই। পূর্বের ভিটার উচাখিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার ও তার ভাই আব্দুল মালেকের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আমি এখানে ৪/৫ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। এখনো আব্দুল মালেককে ভাড়া দিচ্ছি।’
এবিষয়ে আব্দুল মালেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি এবং মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে আরেক আরেক ইজারাদার চাঁন মিয়া জানান, তিনি যখন বাজারের ইজারাদার ছিলেন তখন দোকানগুলো থেকে খাজনা নেয়া হতো। আর মাত্র চা দোকানদার জালালের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া নেয়া হতো। দুই বছর যাবত কোনো দোকান ভাড়া বা খাজনা তিনি নেন না বলে জানান।
এবিষয়ে বাজার ইজারাদার সাইফুল ইসলাম জানান, ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে উচাখিলা তোয়া বাজার সরকারি ডাকে ২৬ লাখ টাকা মূল্যে ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। কিন্তু পূর্বের ইজারাদারের সময় আওয়ামী লীগের লোকজন সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বাজারটি ইজারা নেয়ার পর প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন করেও বাজারটি অবৈধ দখল মুক্ত করতে পারছেন না। এতে তিনি রাজস্ব আদায়ে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি জানান।’
কাঁচাবাজার ক্রয় করতে আসা আলাল উদ্দিন বলেন, ড্রেনের উপর দোকান হওয়ায় বাজারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটি ছোট হয়ে যাওয়ায় পায়ে হেটেও চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সরেজমিন দেখে প্রতিবেদন দিতে আবেদনের কপি নায়েবের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে প্রতিবেন আসলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা রহমান বলেন, ‘শুধু উচ্ছেদের কাজ করলে সেটা পুনরায় বেদখল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উচ্ছেদ আর ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ একসাথে করার পরিকল্পনা নিয়েছি। দ্রুতই সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।’