‘প্রযুক্তি যেন আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, আইন যেন প্রযুক্তির দাস না হয়।’ এই নীতিতে আইন যেন প্রযুক্তির সাথে ন্যায়বিচারের সেতুবন্ধন গড়ে তোলে তার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে আইন ও প্রযুক্তির যুগলবন্দিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রফেসর মো: শাহীন কবীর। তিনি একাধারে গবেষক, শিক্ষক ও নীতিনির্ধারকদের পরামর্শদাতা। বর্তমানে তিনি লক্ষ্মী চাঁদ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি একাডেমিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের বিচারব্যবস্থাকে কিভাবে বদলে দিচ্ছে সে বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তার সাথে কথা বলেছেন দ্বীন মোহাম্মাদ দুখু
প্রযুক্তি ও আইন-এই দুই ভিন্নধর্মী ক্ষেত্রকে একসাথে ভাবার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এলো?
আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি সাধারণ প্রশ্ন থেকে ‘ডিজিটাল যুগে আইন তার নৈতিক ভিত না হারিয়ে কিভাবে টিকে থাকতে পারে?’ এই প্রশ্ন থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয়। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা কিংবা আইওটি এসব প্রযুক্তি শুধু সমাজ নয়, বিচারব্যবস্থাকেও বদলে দিচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে আইনি সিদ্ধান্তে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে?
এআই আইনি গবেষণা, দলিল খসড়া, এমনকি মামলার ফলাফল অনুমানেও সহায়তা করতে পারে। তবে আমি বারবার জোর দেই এই জায়গাটিতে কখনো মানবিক বিচারবুদ্ধির বিকল্প হতে পারে না। আমার এক গবেষণায় বলেছি, ‘আইন শুধু তথ্য নয়, নৈতিকতাও বহন করে। তাই সিদ্ধান্ত হতে হবে মানুষের, সহায় হবে প্রযুক্তি।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় আইওটি ও বিগ ডেটার ব্যবহার কীভাবে দেখছেন?
পুলিশি তদন্তে স্মার্ট ক্যামেরা, ওয়্যারেবল ডিভাইস, রিয়েল-টাইম ডেটা বিশ্লেষণ এখন অনেক কিছু সম্ভব করে তুলছে। কিন্তু এর বিপরীত দিকও রয়েছে অতিরিক্ত নজরদারি, গোপনীয়তার লঙ্ঘন। আমি সবসময় বলি, ‘প্রযুক্তি যেন আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, আইন যেন প্রযুক্তির দাস না হয়।’
অভিবাসন ও বর্ডার কন্ট্রোলে এআই ব্যবহারের ভবিষ্যৎ কী?
এআই দিয়ে ভিসা প্রসেসিং, সীমান্ত নিরাপত্তা অনেক গতি পেয়েছে। তবে ফেসিয়াল রিকগনিশন বা প্রোফাইলিং সঠিক নিয়মে না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকে। আমার পরামর্শ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং মানবকেন্দ্রিক ডিজাইন এই দুইয়ের সমন্বয় ছাড়া এই প্রযুক্তিগুলো নিরাপদ নয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিচারব্যবস্থার ধীরগতির সমাধানে আপনি কী ভাবেন?
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে মামলার জট ভয়াবহ। আমি পরামর্শ দিয়েছি ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার, যাতে কেস ট্র্যাকিং সহজ হয় এবং জবাবদিহিতা বাড়ে।
প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ এই জট কিছুটা হলেও কমাতে পারে।
তরুণদের জন্য কী বার্তা দিতে চান, যারা প্রযুক্তি ও আইন দুয়ের দিকেই আগ্রহী?
আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতের আইনজীবীকে অ্যালগরিদম বুঝতে হবে এবং প্রযুক্তিবিদদেরও ন্যায়বিচার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এই যুগে একক দক্ষতা যথেষ্ট নয়, দরকার সহযোগিতামূলক মনোভাব। তরুণদের বলি তোমরা যদি প্রযুক্তির ভাষা জানো আর ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধ থাকো, ভবিষ্যৎ তোমাদের। শেষ কথা : প্রযুক্তির দাপটে ন্যায় যেন বিলীন না হয়ে যায়।