এই সুযোগে মেরুদণ্ড ভেঙে দেন জামায়াত-শিবিরের

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা-ইনুর কথোপকথনের রেকর্ড

এটি নিছক একটি কথোপকথন নয়, বরং জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে নেয়া প্রতিক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণের স্পষ্ট নির্দেশনাগুলো ফুটে উঠেছে এখানে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা-ইনুর কথোপকথনের রেকর্ড
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা-ইনুর কথোপকথনের রেকর্ড

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর মধ্যে একটি গোপন কথোপকথন প্রকাশ্যে এসেছে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা সৃষ্টি করেছে। কথোপকথনের মূল প্রেক্ষাপট ছিল দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি।

অডিওটিতে শোনা যায়, সরকার আন্দোলনকারীদের সাথে নয়, বরং ‘নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াত’-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে এমন বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে আলোচনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশে ইনু বলেন, ‘এই সুযোগে জামায়াত শিবিরের মেরুদণ্ডটা ভেঙে দেন।’ এ কথাটিই অডিওটির রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে আলোচিত লাইন হয়ে উঠেছে।

কথোপকথনে আসে সেনা মোতায়েন, ইন্টারনেট বন্ধ রাখা, হেলিকপ্টার থেকে ‘বম্বিং’ করার ইচ্ছা, গ্রাউন্ড লিডারদের গ্রেফতার করে ফেলার পরিকল্পনা এবং ছাত্রদল-বিএনপি-শিবিরের তালিকা তৈরির মতো রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের।

এটি নিছক একটি কথোপকথন নয়, বরং জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে নেয়া প্রতিক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণের স্পষ্ট নির্দেশনাগুলো ফুটে উঠেছে এখানে।

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা, যিনি প্রসিকিউশন এবং তদন্ত দলেরও সদস্য। শেখ হাসিনার সাথে ঢাকা দক্ষিণের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এস এম মাকসুদ কামাল এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের চারটি অডিও তিনি আদালতে উপস্থাপন করেন। এসব অডিওতে এই তিনজনের সাথে আন্দোলন দমনের বিষয়ে যার কণ্ঠ শোনা গেছে, সেটি শেখ হাসিনার বলে এ বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। তার ভাষ্য, এখানে শেখ হাসিনার কণ্ঠে ড্রোন দিয়ে শনাক্ত করতে এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়ার কথা বলতে শোনা যায়। ট্রাইব্যুনালে অডিওগুলো বাজিয়ে শোনানো হয়।

তানভীর হাসান জোহা এ মামলার ৫৩ নম্বর সাক্ষী। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বেঞ্চ তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ট্রাইব্যুনালের আরেক সদস্য ছিলেন মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। সাক্ষ্য শেষে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাকে জেরা করেন।

শেখ হাসিনার সাথে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দু’টি কথোপকথন একটি সিডি থেকে ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়। যার একটির হুবহু বর্ণনা এখানে দেয়া হলো।

ইনু : হ্যালো জি স্লামআলাইকুম। ইনু বলছিলাম। আমরা মনে হয় যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট সারা বাংলাদেশ থেকে পাচ্ছি। খালি ঢাকাতে রামপুরার দিকে এবং শনির আখরা...।

হাসিনা : রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখরায় একটু ঝামেলা।

ইনু : শনির আখরায় কিছু মোল্লারা। ৪১টি মাদরাসা।

হাসিনা : খালি মোল্লা না, ওই খানে অনেক মাদরাসা।

ইনু : অনেক মাদরাসা আছে।

হাসিনা : ওদের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা (আকাশপথে অবতরণকারী সেনা) পাঠাচ্ছি। আমি বলছি ক্যাজুয়ালি দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো। ঠিক আছে আকাশ থেকে নামবে। তখন দুই পাশ দিয়ে ধরবে। মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে। আর হেলিকপ্টার দিয়ে বম্বিং করা হবে। র‌্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে।

ইনু : উপর থেকে সাউন্ড বোম যাবে আর কী। আমি একটি পয়েন্ট আপনার নজরে আনার রিকুয়েস্ট করতেছি যে, কাউফিউ দু-চার দিন যা চলল চলল। কিন্তু কারফিউর পরে যাতে আর বেশি না নামতে পারে সে জন্য একটু হুম ওয়ার্ক করা দরকার। যেমন- উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে, সেগুলো চিহ্নিত আছে। ছাত্রদল, বিএনপি, শিবিরের ছেলেরা। রিজভীকে অ্যারেস্ট করা ইম্পর্টেন্ট না, ওখানে গ্রাউন্ডে যারা মিছিল লিড করছে...।

আমি আমার কুষ্টিয়া জেলাতে এসপিকে বলেছি, গ্রাউন্ডে যারা মিছিল লিড করেছে। তাদের লিস্ট করে ফেলতে। ওখানে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। একটি ছররা গুলিতে একজন পায়ে ইনজুরড হয়েছে। উনি ম্যানেজ করছে। উনি অলরেডি কম্পিউটারের সামনে বসে ছবি দেখে দেখে তালিকা করতেছে। আমি বলেছি ওই ছেলেদের (মিছিল লিডকারী) আজকে রাতের মধ্যে পিকআপ করে দাও। মিছিলে যেন আর লিড করতে না পারে। আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি যে মিছিল লিড করে কারা তাদের তালিকাটা করে ফেলতে।

হাসিনা : লোকাল লিডার দিয়ে তালিকাটা করতে হবে।

ইনু : উত্তরায় এমপি খসরু আছে, হাসান আরিফ আছে। আমার কালকের যে রিপোর্ট হাসান আরিফ নামেনি কিন্তু। ও রাগ করে খসরুর উপরে ছেড়ে দিয়েছে এমপি সাহেব মোকাবেলা করুক।

হাসিনা : খসরু সাহেব লোকাল না। হাসান আরিফ লোকাল, ওদের তো লোকজন আছে।

ইনু : হাসান আরিফ নামেনি। আর এখানে ওয়াকিলও সামলাতে পারেনি, ও দুই লাইনে পা দিয়ে চলে। আমার কথা হচ্ছে লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে আজকে রাতের ভেতরে যদি সব কাস্টুডিতে নিতে পারেন। তাহলে মনে হয়... আর মোহাম্মদপুরে কালকে রাতের অ্যাকশনটা নিয়ে ভালো করেছেন। তা না হলে আজকে গণভবন ঘেরাও করত কিন্তু। মোহাম্মদপুর থেকে কিন্তু একটি গ্রুপ রেডি হচ্ছিল। আপনার ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে।

হাসিনা : থ্যাঙ্কিউ, আমরা হলাম রণক্ষেত্রের সাথী।

ইনু : হ্যাঁ, রণক্ষেত্রের সাথী। আপনি একটু দয়া করে এই পিকআপটা করতে বলেন।

হাসিনা : না, এটি বলা আছে।

ইনু : এটি একটি হুম ওয়ার্ক করতে বলেন। করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন আজকে। শ’ দু-এক অ্যারেস্ট করে ফেললে মিছিল করার আর লোক থাকবে না। আর একটি রিকোয়েস্ট আমার। ইন্টারনেটটা মনে হয় চালু করে ফেলতে পারেন। এটি আমাদেরই কাজে লাগবে।

হাসিনা : কিভাবে চালু করব। সব তো পোড়াইয়া দিছে। ডাটা সেন্টারও পোড়াইয়া দিয়েছে, তারতুর সব পুরাইয়া দিছে।

ইনু : আজ রাতে আমি একাত্তুরে (৭১ টিভি) যাবো। গিয়ে একটা কথা বলব, আমি বলব যে সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ নাই। সরকারের সাথে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি জামায়াতের।

হাসিনা : এটি তো ভালো। আমি নিজেও বলছি।

ইনু : এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে। যদি ইন্টারনেট থাকে গণমাধ্যম দিয়ে এটি আমরা বলে দিলাম।

হাসিনা : ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পোড়াইয়া দিছে। আমি তো আর আনব টানব না। যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে। আমি দিছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াইছে, থাকুক।

ইনু : হাসতে হাসতে বলেন, বাংলাদেশে অন্য সরকার আসবে না।

হাসিনা : আসুক, আমি যাচ্ছি এখনই। জামায়াতকে শায়েস্তা করে যেতে হবে। আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে তালিকাগুলো করে ফেলেন।

ইনু : এই সুযোগে জামায়াত শিবিরের মেরুদণ্ডটা ভেঙে দেন।

হাসিনা : একেবারে।

ইনু : বাদ বাকি আমাকে যেটা বলবেন আমি করব। ইনশা আল্লাহ।

এর আগে শেখ হাসিনা ও ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র তাপসের টেলিফোন আলাপের একটি অংশে শোনা যায়, একপর্যায়ে তাপস বলেন, জি আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, সব জায়গায় আগুন, বিআরটি বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ, সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কিভাবে! তাপস বলেন, জি, এটি ভালো হইছে, জি। শেখ হাসিনা বলেন, না... পোড়াইয়া দিছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে... ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে।

তাপস বলেন, জি, ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ করবে। শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেটি পোড়াইছে...।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সাথে কথপোকথনে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, রাজাকারদের যেভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদেরও একইভাবে ফাঁসি দেয়া হবে।

জবানবন্দীতে তানভীর হাসান বলেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর এনটিএমসি থেকে জব্দ করেন। জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লেথাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

পরে প্রসিকিউটর মো: মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই সাক্ষী প্রসিকিউশনের এবং ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির অন্যতম সদস্য। ওনার সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়বস্তু ছিল ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয়ে যে ইনভেস্টিগেশন করেছেন, তার কিছু অংশ। শেখ হাসিনার তিনটি অডিও-সংবলিত সিডি জব্দ করেছেন। তিনটি মোবাইলের সিডি জব্দ করেছেন।

এই সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার সাথে তার নিকটাত্মীয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ফজলে নূর তাপসের একটি কথপোকথন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এস এম মাকসুদ কামালের একটি কথপোকথন এবং হাসানুল হক ইনুর দু’টি ফোনালাপের সিডি জমা দেন। এই সাক্ষ্য বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং ফজলে নূর তাপসের কথপোকথনে আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য উনি (শেখ হাসিনা) লেথাল উইপন, গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে শনাক্ত করে হেলিকপ্টারে গুলির কথা বলেছেন।’

অডিওতে এস এম মাকসুদ কামালকে তার বাসায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামসহ কয়েকজনের অবস্থানের কথা বলতে শোনা যায়।

এ ব্যাপারে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় একজন শিক্ষক হিসেবে যে ধরনের কথাবার্তা বলেছেন; সন্ত্রাসী লালনপালনের যে প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। উনি সন্ত্রাসীদের কিভাবে লালন করবেন, কিভাবে ব্যবহার করবেন, তার একটা বর্ণনা দিয়েছেন।’

শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথপোকথন নিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, এ দেশে একাত্তর সালে মানুষ যুদ্ধ করেছিল বিদেশী দখলদারের বিরুদ্ধে, যারা এ দেশের মানুষের ওপর বম্বিং করেছে, গুলি করেছে। দেশের একজন সরকারপ্রধান, যিনি তাকে নির্বাচিত দাবি করেন, তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ছত্রীসেনা এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন; বম্বিং করার নির্দেশ দিচ্ছেন।

‘এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা উনি বন্ধ করে দিয়েছেন। সেটিকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন। আরেকটি কাজ করেছেন, উনি বলেছেন যে, আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, ওরা পুড়িয়ে দিলো সেতু ভবন। তার মানে আগুন দেয়ার নির্দেশ উনি দিয়েছেন; কিন্তু উনার কাক্সিক্ষত জিনিস না পোড়ায়ে অন্য স্থাপনা পুড়ে ফেলা হয়েছে।

এ দিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজের শুরুতেই অবশিষ্ট সাক্ষ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ আনিসুর রহমান। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এরপর বেলা ১টা থেকে বিকেল ৪টার পর পর্যন্ত এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা চলে। এখন শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি। আগামী রোববার তার জবানবন্দী নেয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

এর আগে, ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজের শুরুতে ৪৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দেয়া অবশিষ্ট সাক্ষ্য দেন শাহেদ জোবায়ের লরেন্স। এরপর ৫০তম সাক্ষীর সাক্ষ্য শুরু হয়। জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে আরো দু’জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ মো: কামরুল হোসাইন ও আনিসুর রহমান। তাদের জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী।

২২ সেপ্টেম্বর ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। এর মধ্য দিয়ে ঘটনার সাক্ষ্য সম্পন্ন করেন প্রসিকিউশন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেই শুরু হবে যুক্তিতর্ক।

এ দিকে আজ সকালেও মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দী দেয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দী দিচ্ছেন সাক্ষীরা।

গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন চৌধুরী মামুন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। একই সাথে অজানা অনেক তথ্য ট্রাইব্যুনালের সামনে এনেছেন।

সাক্ষীদের জবানবন্দীতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।