বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দে ব্যাকুল হয় মন। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরতে ধরতে নস্টালজিক হননি এমন কেউ নেই বললেই চলে। খোলা আকাশে বৃষ্টিতে ভেজেনি এমন প্রেমিকজুটি কি আছে? এ সময়ে রোগবালাই হলে আনন্দ তো মাটি হয়ই, ঘিরে ধরে অবসাদ। সচেতন হলে রোগবালাই দূরে রাখা সম্ভব।
সাধারণ সর্দি-জ্বর : বর্ষাকালে সর্দি-জ্বর-কাশির প্রকোপ বাড়ে। ঘরে ঘরে দেখা দেয় এ সমস্যা। এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া, যা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল সেবন করুন। দিনে চারবার প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। জ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। এটি খুবই মারাত্মক। জ্বর সাতদিনের বেশি হলে, মাত্রা খুব বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। সর্দি-কাশি থাকলে এন্টিহিস্টামিন যেমন ফেক্সোফেনাডিন, ডেসলোরাটিডিন, রুপাডিন রাতে একটা সেবন করতে পারেন। এছাড়া কুসুম গরম পানিতে আদার রস, লেবুর রস, মধু, লবঙ্গ, তুলসী পাতার রস মিশিয়ে পান করুন। এতে আরাম পাবেন। কাশি যদি সহজেই না সাড়ে তাহলে এন্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শমত এন্টিবায়োটিক সেবন করতে পারেন।
ডায়রিয়া ও টাইফয়েড- বর্ষার পানিতে ঢুবে যায় বিশুদ্ধ পানির উৎস ও সরবরাহকারী পাইপলাইন। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা হলে ঢুবে যায় টিউবওয়েল, পানির ট্যাংক। ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হয় খাবার পানি। ফলে বাদল দিনে ডায়রিয়া ও টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ে। খাবার পানি বিশুদ্ধ করতে পারলে কিন্তু ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে খুব সহজেই। পানি ফুটালে বিনা খরচেই বিশুদ্ধ করা যায়। পানি ফুটতে শুরু করলে কমপক্ষে আরো ১০ মিনিট জ্বাল দিন। হ্যালোট্যাব দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করতে পারেন। পানি বিশুদ্ধ করার পর পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করুন। ডায়রিয়ার হলে প্রতিবার পায়খানার পর যতটুকু পারেন ওরস্যালাইন পান করুন। আপনা-আপনি ডায়রিয়া ভালো হবে। অযথা এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। কলেরা ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে এন্টিবায়োটিক সেবন করলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক সেবন নয়। খাবারের আগে ও শৌচকর্মের পরে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করুন। এছাড়া প্রতি বছর টাইফয়েডের টিকা নিতে পারেন।
ডেঙ্গু : বৃষ্টির পানি টব, টায়ার, ডাবের খোসা, ছাদ, নিচু স্থানে জমা হয়। পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। এদের কামড়ে দেখা দেয় ডেঙ্গু। এটি অন্য সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মতোই। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বর (১০৩-১০৪ ডিগ্রি) দেখা দেয়। সাথে থাকে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, চোখের নিচে ব্যথা (চোখ নড়ালে ব্যথা অনুভূত হয়)। জ্বর সাধারণত ২-৭ দিন পর কমে যায়। বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই আর সমস্যা হয় না। তবে বিপত্তি ঘটে যদি রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে। রক্তক্ষরণ সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার ২-৩ দিন পর হতে পারে। তাই জ্বর ভালো হওয়ার পর খেয়াল রাখতে হবে ব্রাশ করার সময় দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে কিনা, প্রস্রাব লালচে হচ্ছে কিনা, মলের সাথে রক্ত যায় কিনা, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে কিনা বা রক্ত চোখে জমাট বেঁধেছে কিনা। আবার অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হতে পারে যেটা বাহির থেকে দেখা সম্ভব নয়। রক্তচাপ কমে গেলে, দীর্ঘ সময় ধরে প্রসাব না হলে, পেটে ব্যথা হলে, শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে, অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাম হলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে বোঝা যায় শরীরের অভ্যন্তরে রক্তরক্ষণ হতে পারে। এসব উপসর্গগুলো দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। জটিলতা দেখা না দিলে এর চিকিৎসা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতোই।