পানির প্রতি স্বভাবতই মানুষের আকর্ষণ কাজ করে। সাগরের পাশে দাঁড়িয়ে ঢেউয়ের খেলা দেখতে মন টানে সবার। পুকুরে দস্যি ছেলেদের লাফানোর দৃৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে ভোলেন না অনেকেই। গ্রামের খোলামেলা শান বাঁধানো পুকুর এখন অনেক কমে গেছে। শহরে এমনটা কল্পনা করাই ভুল। এর পরিবর্তে আছে সুইমিংপুল। বড় বড় হোটেলগুলোতে সাঁতার কাটার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সুইমিংপুল। কিন্তু এগুলো কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে কি আমরা একবারও ভেবেছি।
সুইমিংপুলের পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। এ ক্লোরিন মানুষের ঘাম, কসমেটিকস, ত্বকের কোষ, প্রসাবের সাথে মিশে প্রায় শখানেক কেমিকেল তৈরি করে। এদের অধিকাংশই দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ কেমিকেলগুলো শ্বাসতন্ত্রকে সংবেদনশীল করে হাঁপানিতে আক্রান্ত করতে পারে। শুধু তাই নয় এটি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।
এনভারমেন্টাল হেলথ পারস্পেকটিভ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ৫০ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিকে ৪০ মিনিট ধরে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে বলা হয়। এরপর তাদের শরীরের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখা হয়। দেখা যায় তাদের বেশির ভাগই সাঁতার কাটার ফলে হাঁপানির মতো লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। শরীরে আরো পরীক্ষা করে তাদের ডিএনএ-তে ধ্বংস প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হল। দেখা গেল এ ডিএনএ-র পরিবর্তন ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। সাধারণত মুত্রথলির ক্যান্সার বেশি হয়। অতিরিক্ত ক্লোরিন ব্যবহারের ফলে ত্বকের অ্যাকজিমা, চুলকানি, র্যাশ বেশি দেখা যায়। এছাড়া চোখে জ্বালাপোড়া করতে পারে। সুইমিংপুলের পানি পেটে গেলে পেটের পীড়া, হেপাটাইটিস-এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলে শিশুদের কি ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণা লব্ধ ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশু ২ বছর বয়সের আগে সুইমিং পুলে নেমেছে তাদের ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্তের হার বেশি। যারা বেশি সময় ধরে পুলে থেকেছে তাদের হার তত বেশি। যারা নিয়মিত পুলে থেকেছে তারা ৬ বছরের আগে হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
যারা ক্লোরিনযুক্ত সুুইমিংপুলে কাজ করেন তাদের নিয়ে ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায় তারা ভুলে যাওয়া, অবসাদ, দীর্ঘমেয়াদী ঠাণ্ডা, কণ্ঠস্বরের সমস্যা, মাথাব্যথা, গলায় ক্ষত, অ্যাকজিমা, পেটের পীড়ায় বেশি আক্রান্ত হন। এমনকি তাদের মধ্যে বন্ধ্যত্বের হারও বেশি। এ গবেষণায় বলা হয়েছে সুইমিংপুল ব্যবহারকারীরাও এমন সমস্যায় ভুগতে পারেন।
সুইমিংপুল ব্যবহারে তাই সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)। তারা বলেছে সুইমিং পুল ব্যবহারের আগে ও পরে ভালো করে গোসল করতে হবে, পানি যেন পেটে না ঢোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুলের পানিতে ও আশেপাশে প্রসাব করা যাবে না। শিশুদের ডায়াপার পুলের পাশে পরিবর্তন করা যাবে না। পেটে পীড়া দেখা দিলে পুল ব্যবহার করবেন না। আপনি যে পুল ব্যবহার করছেন তাতে ক্লোরিন কি মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে তা খোঁজ নিন। যদি পুলের পানিতে বেশি ঝাঁঝ থাকে তাহলে সে পুল পরিহার করে অন্য পুল বাছাই করুন। দাম কম বলে পুলের পানি পরিশোধনে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। ওজন, কপার, সিলভার দ্বারা পরিশোধিত পুলে কম ক্ষতিকর। ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে কপার সিলভার পরিশোধিত পুলে শিশুদের হাঁপানি হয় না বললেই চলে। এটিও মাথায় রাখুন। পুলের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা হয় কিনা তা জেনে নিন। ত্বকে র্যাশ, অ্যাকজিমা হলে পুল ব্যবহার থেকে বিরত হোন। সুইমিং পুলের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর বিভিন্ন পার্কের পানির রাইডগুলো। সুইমিং পুলে লোকের আনাগোনা সীমিত কিন্তু রাইডগুলোতে কিন্তু তা নয়। এগুলোতে নিয়মিত পরিশোধিত পানি ব্যবহার করা হয় না। তাই এদের স্বাস্থ্য সমস্যাও বেশি ও জটিল।