পরিবেশবান্ধব কিছু খাবার ক্যান্সার হৃদরোগসহ অকাল মৃত্যু রোধ করে

হামিম উল কবির
Printed Edition

কিছু পরিবেশবান্ধব খাবার নিয়মিত খেলে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ অকাল মৃত্যু রোধ করতে পারে। একই সাথে এসব খাবারের সাথে কম ক্যালরির গোশত ও দুগ্ধজাত খাবার থাকতে হবে। একটি গবেষণায় এসব তথ্য জানা যায়। গবেষকরা বলছেন, এসব খাবারে ২৭ শতাংশ অকাল মৃত্যুরোধ করে এবং হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অন্যান্য ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ‘২০২৫ ইট-লেনসেট কমিশনের’ রিপোর্টে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এই খাবারগুলো হলো- হোলগ্রেইন (প্রসেসহীন পুরো শস্যদানা), ফল, চীনা বাদাম, শিম জাতীয় শস্যের বীজ, মসুর ডাল, মটরশুটি অন্যতম। এর সাথে মাঝারি অথবা ছোট মানের মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ও কম ক্যালরিযুক্ত গোশত।

গবেষকরা লিখেছেন, ‘বর্তমানে, মাটিতে জন্মানো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে এই পৃথিবীর মানুষ উল্লেখযোগ্যভাবে বিচ্যুত হয়ে গেছে অর্থাৎ মানুষ প্রসেস খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এই ধরনের পরিবর্তন আনতে পারলে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ মৃত্যু (বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর ২৭ শতাংশ) এড়ানো যেতে পারে। সরাসরি মাটিতে উৎপাদিত খাবারে অভ্যস্ত হতে পারলে অনেক অসংক্রামক রোগের হার কমে যাবে এবং বেড়ে যেতে পারে মানুষের আয়ু। গবেষকরা এসব খাবারের পরিবেশগত সুবিধাগুলো তুলে ধরেছেন তাদের গবেষণায়। তারা বলছেন, লাল গোশতের মতো খাবারের চাহিদা কমে গেলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কম এবং একই সাথে জমির বাড়তি ব্যবহার ও পানির ব্যবহার কমিয়ে দেবে।

স্বাস্থ্যকর এই ডায়েট মানুষকে গোটা শস্যদানা (প্রতিদিন প্রায় ১৫০ গ্রাম বা তিন থেকে চারবার), ফল এবং প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম শাকসবজি (কমপে পাঁচবার), প্রতিদিন ২৫ গ্রাম বাদাম এবং প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ২০০ গ্রাম লাল গোশত, প্রতি সপ্তাহে ৪০০ গ্রাম হাঁস-মুরগির গোশত, প্রতি সপ্তাহে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত মাছ দুইবার, প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারটি ডিম এবং প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত (এর মধ্যে দুধ, দই বা পনির থাকতে পারে) দুগ্ধজাত পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। এই ডায়েটের সাথে সীমিত চিনি, সম্পৃক্ত ফ্যাট ও লবণ থাকতে পারে যেগুলো প্রসেসড খাবারে পাওয়া যায়।

বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণা তহবিলের গবেষণা ও নীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক ড. হেলেন ক্রোকার বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সবার জন্য টেকসই এবং সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে সমর্থন করার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কমিশন স্বাগত জানিয়েছে। এই প্রতিবেদনে মাটিতে উৎপাদিত খাদ্যভ্যাস উন্নত ও স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে সম্পর্কিত। আমরা যে গবেষণায় অর্থায়ন করেছি তা ক্যান্সার নির্ণয়ের পর এই জাতীয় খাদ্যাভ্যাসকে সমর্থন করে। স্বাস্থ্যকর খাবার প্রাপ্যতা মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে হবে।

গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী পর্যাপ্ত খাবার উৎপাদিত হলেও, বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৩৭০ কোটি মানুষ (প্রায় অর্ধেক) স্বাস্থ্যকর খাবার খায় জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্ভরযোগ্য সুযোগ থাকে না বলে। তারা আরো বলেন, খাদ্যব্যবস্থার কারণে সৃষ্ট সামগ্রিক পরিবেশগত চাপে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের জন্য বিশ্বের ৩০ শতাংশ ধনী মানুষের খাদ্যাভ্যাস দায়ী। এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি লেনসেট কমিশন ছাড়াও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইংরেজি দৈনিকে ছাপা হয়েছে।