সালথায় দেশীয় পাটবীজ উৎপাদনে কৃষকের সফলতার হাতছানি

পাঁচ বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় বীজে আবাদ চালিয়ে আসা কিছু কৃষক এ বছর উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পথে এগোচ্ছেন। কৃষি উদ্যোক্তা মুক্তার হোসেন মোল্লা তাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি ধারাবাহিকভাবে দেশীয় বীজের আবাদ করে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন স্থানীয় চাষিদের কাছে।

Printed Edition
দেশীয় নাবী বীজের পাটগাছ দেখছেন এক কৃষক
দেশীয় নাবী বীজের পাটগাছ দেখছেন এক কৃষক |নয়া দিগন্ত

কাজী আফতাব হোসেন নগরকান্দা-সালথা (ফরিদপুর)

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় প্রথমবারের মতো দেশীয় নাবী পাটবীজ উৎপাদনে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা। পাঁচ বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় বীজে আবাদ চালিয়ে আসা কিছু কৃষক এ বছর উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পথে এগোচ্ছেন। কৃষি উদ্যোক্তা মুক্তার হোসেন মোল্লা তাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি ধারাবাহিকভাবে দেশীয় বীজের আবাদ করে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন স্থানীয় চাষিদের কাছে।

উপজেলা পাট উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সালথায় মোট ৯৩ জন কৃষক ১০ একর জমিতে নাবী পাটবীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় পাটচাষি গোলাম মোস্তফা ও জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা জানান, তারা পরীক্ষামূলকভাবে জমিতে নাবী পাটবীজের আবাদ শুরু করেছেন। ফলন ভালো হলে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে আবাদ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কৃষি উদ্যোক্তা মুক্তার হোসেন মোল্লা বলেন, আমাদের প্রতি বছর ভারতের বীজের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু আমি টানা পাঁচ বছর ধরে দেশীয় বীজ উৎপাদন করছি। এবারো এক একর জমিতে আবাদ করেছি। প্রতিদিন জমি থেকে তুলতে থাকা পাটশাক বাজারে বিক্রি করছি। বর্তমানে গাছের গঠন ভালো, আশা করছি, ডিসেম্বর মাসে ঘরে তুলতে পারব মানসম্পন্ন বীজ। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন শাক বিক্রি করে নগদ অর্থ পাচ্ছেন, যা আগাম আয় হিসেবে তাকে লাভবান করছে। একই সাথে তিনি কৃষকদের দেশীয় বীজ উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, পাট অধিদফতরের উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর প্রথমবার সালথায় নাবী পাটবীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১০ একর জমির জন্য বীজ বরাদ্দ দেয়া হলেও রাসায়নিক সার বরাদ্দ না থাকায় মাত্র ৯৩ জন কৃষককে এই বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রামকান্তপুর ইউনিয়নের কৃষক মুক্তার মোল্লা এক একর জমিতে, গোলাম মোস্তফা ১০ শতাংশ, হাফিজুর রহমান ২০ শতাংশ এবং জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ১৫ শতাংশ জমিতে নাবী পাটবীজের আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে মুক্তার মোল্লা প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার পাটশাক বিক্রি করে বাড়তি লাভ করছেন। এতে স্থানীয় চাষিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে দেশীয় বীজ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশীয় নাবী পাটবীজের সফল উৎপাদন হলে ভবিষ্যতে বিদেশী বীজের ওপর নির্ভরতা কমবে, কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং পাটশিল্পে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।

Topics