গুমের ২ মামলায় সেনাসদস্যদের হাজিরা পেছাল

গুম-নির্যাতনের দুই মামলার পরবর্তী তারিখ ছিল আগামী ২০ নভেম্বর। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে রোববার এ মামলার তারিখ পরিবর্তনের জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৩ নভেম্বর এ দুই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশনের নিজস্ব জটিলতার (ডিফিকাল্টি) কারণে এই সময়ের আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition

গুমের দুই মামলায় সেনাসদস্যদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের সময় তিন দিন পেছানো হয়েছে। গতকাল রোববার প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩ সেনাকর্মকর্তাকে আগামী ২৩ নভেম্বর এবং রামপুরায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দু’জনকে হাজিরে ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এক ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজি মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা তিন মামলার মধ্যে দু’টি আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা। এ ছাড়া অপর মামলাটি করা হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনাকর্মকর্তাকে। যাদের মধ্যে ১৫ জন সেনাকর্মকর্তা এখনো কর্মরত। এ ছাড়া ৯ জন অবসরে ও একজন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটিতে) আছেন।

ব্রিফিংয়ে সেনাসদস্যদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন পরিবর্তনের আবেদনের কথা উল্লেখ করে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, গুম-নির্যাতনের দুই মামলার পরবর্তী তারিখ ছিল আগামী ২০ নভেম্বর। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে রোববার এ মামলার তারিখ পরিবর্তনের জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৩ নভেম্বর এ দুই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশনের নিজস্ব জটিলতার (ডিফিকাল্টি) কারণে এই সময়ের আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অপর মামলায় দুই সেনাকর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত ছিল। তবে সেই সময়ও পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে এ মামলার পরবর্তী তারিখ ২৪ নভেম্বর ধার্য করেছেন বলেও জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজি মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

জিয়াউলের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ পর্যায়ে : আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনসহ নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। তবে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

রোববার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি এ মামলার অগ্রগতি তুলে ধরেন। একইসাথে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরো দুই মাস সময় চান। পরে তার আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, আজ বেশ কয়েকটি মামলার শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গুমের অভিযোগে হওয়া মামলা। যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ওই মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল আজ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে এ মামলায় সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। পরে তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

তিনি বলেন, এ মামলায় এরই মধ্যে দু’টি ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। আরেকটি অংশের তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে যাব। আসলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন আসামি ছিল। তবে দু’টি অংশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়ে ফরমাল চার্জ আকারে ট্রাইব্যুনালে দেয়া হয়েছে। আরেকটি অংশের তদন্ত একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা। সে জন্য দুই মাস সময় চেয়েছি। গুমের এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলসহ শুনানির জন্য গতকাল রোববার দিন ধার্য ছিল। গত ২৪ আগস্ট এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।