পিয়ারাতলা এখন ড্রাগনের রাজধানী

প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে আড়াই কোটি টাকার ফল

মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাজারটি দেশের অন্যতম বৃহৎ ড্রাগন ফলের পাইকারি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

আতিয়ার রহমান, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা)
Printed Edition

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের পিয়ারাতলা বাজার এককালে চালের মিল ও চাতালের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই পরিচয় ধীরে ধীরে বদলে গিয়ে এখন এই বাজারটি পরিচিতি পাচ্ছে ‘ড্রাগনের রাজধানী’ নামে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাজারটি দেশের অন্যতম বৃহৎ ড্রাগন ফলের পাইকারি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিদিন পিয়ারাতলার ফল বাজারে প্রায় দুই কোটি থেকে আড়াই কোটি টাকার ড্রাগন ফল কেনাবেচা হয়। এখান থেকে ড্রাগন ফল যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে। জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের পাশেই পিয়ারাতলা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এক পুরোনো চাতালে ২০২৩ সালে স্থানীয় কয়েকজন চাষি ও যুবক মিলে ‘ফল ভাণ্ডার’ নামে একটি ড্রাগন ফলের আড়ৎ চালু করেন। শুরুতে অনেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও এখন এখানে শতাধিক আড়ৎ গড়ে উঠেছে।

বাজার কমিটির সভাপতি সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুরুতে আমাদের উদ্যোগ নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করতেন। আজ পিয়ারাতলা দেশের অন্যতম ড্রাগন ফলের বাজারে রূপ নিয়েছে।’ তার মতে, বাজারটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করে। অনেক শিক্ষিত তরুণও এখন এ বাজারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন।

জাহাঙ্গীর আলম নামে অনার্স-মাস্টার্স করা এক যুবক বলেন, চাকরি পাওয়ার আগে শুধু শুধু বেকার বসে না থেকে এখন একটি ড্রাগন আড়তে কাজ করছি। তিনি জানান, প্রতিদিন খাবার বাবদ ১০০ টাকা এবং মজুরি হিসেবে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন তিনি।

ড্রাগনের বাজার গড়ে ওঠায় লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও। হাসাদহ তারানিবাস গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘প্রথমে ১০ কাঠা জমিতে শখের বশে ড্রাগন চাষ শুরু করি। ফলন ভালো হওয়ায় এবার দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছি। বাজার কাছে থাকায় ফল বিক্রি করতেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।’

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সঠিক দামে মানসম্মত ড্রাগন কেনার সুযোগ থাকায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে বেপারীরা এখানে ছুটে আসছেন। ঢাকার বেপারী আবুল কাশেম বলেন, ‘এখানে ভালো মানের ফল পাওয়া যাচ্ছে, পরিবহন সুবিধাও ভালো। তাই পিয়ারাতলা বাজারে এসে ড্রাগন কিনে ঢাকা নিয়ে বিক্রি করি।’

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, জীবননগরে উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা ক্রমে বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফলের ব্যাবসায়ীরা এসে এখান থেকে ড্রাগন কিনে নিয়ে যান। ‘মদিনা ফল ভাণ্ডার’-এর মালিক মসলেম উদ্দিন ও কামরুজ্জামান ফুলবাবু জানান, দুই বছর আগেও কেউ ভাবেনি, এখানে প্রতিদিন দুই কোটি টাকারও বেশি ড্রাগন ফল বিক্রি হবে। এখন অনেকেই পিয়ারাতলাকে ড্রাগনের রাজধানী বলছেন। নামটা শুনতে ভালোই লাগে।

পিয়ারাতলার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আশপাশের আন্দুলবাড়ীয়া, হাসাদহ, শাহাপুর ও রায়পুর এলাকাতেও আলাদা ড্রাগনের বাজার গড়ে উঠছে। এতে প্রতিযোগিতা তৈরি হলেও ন্যায্য মূল্যই পাচ্ছেন কৃষকরা।

জেলা বিপণন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) সহিদুল ইসলাম জানান, চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও বাজার সম্প্রসারণে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, এ উপজেলার মাটি ও জলবায়ু ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এখানকার কৃষকেরা শুধু ড্রাগন নয়, অন্যান্য ফলও নিরাপদ এবং বিষমুক্ত উপায়ে উৎপাদন করছেন, যা আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করছে।