পাকিস্তানের সাথে সমঝোতাচুক্তি, উভয় দেশকে শক্তি জোগাবে

পাকিস্তান ’৭১-এর অপরাধের ক্ষমা চাওয়ার পরও দেশটির সাথে শত্রুতা বজায় রাখা ঠিক নয়। এতে আমাদের কোনো লাভ নেই।

জুলাই বিপ্লবের পর পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের তাগিদ অনুভূত হয়। দেশটির সাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ জড়িত। রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ ভূ-রাজনীতির নানা বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থনের ভিত্তিতে উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। দেশটির সাথে আমাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত মিল অনস্বীকার্য। গত ৫৪ বছর সময়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তৃতীয়পক্ষের ইন্ধনে পাকিস্তানের সাথে শত্রুতার নীতি নেয়া হয়। গত এক যুগের বেশি সময় পাকিস্তানের সাথে মেলামেশায় একধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল, যা আমাদের জন্য কোনোভাবে লাভজনক হয়নি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সফরে উভয় দেশের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্কের সূচনার সুযোগ এসেছে। আশা করা যায়, দেশ দু’টির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উভয়ের স্বার্থ সমুন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা সফরে ইসহাক দার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ও তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে বৈঠক করেছেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানের সাথে মিলিত হয়ে শুভেচ্ছাবিনিময় ও তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে তার আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। তাতে বাণিজ্য, যোগাযোগ, কৃষি, প্রতিরক্ষা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর একটি চুক্তি, পাঁচটি সমঝোতাস্মারক সই হয়েছে।

দু’দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসামুক্ত যাতায়াত, দেশ দু’টির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা, বাণিজ্য-বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও গবেষণা সংস্থার মধ্যে কৌশল বিনিময়ের সমঝোতা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০০ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দেবে পাকিস্তান। জুলাই বিপ্লবে আহত ৪০ শিক্ষার্থীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনেরও অঙ্গীকার করেছে তারা।

রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আঞ্চলিক কোনো শক্তিকে বাংলাদেশ পাশে পায়নি। আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক থেকেও সুফল অর্জন করা যায়নি। পানি আগ্রাসন নিয়েও বাংলাদেশ বিপদে। ফিলিস্তিনসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের একসাথে কাজ করার সুযোগ আছে। বৈঠকে কূটনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ’৭১ সালের গণহত্যাসহ অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের প্রশ্ন বৈঠকে তোলা হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে তার দেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার ক্ষমা চাওয়ার বিষয় উল্লেখ করেন। আশার কথা, উভয় দেশ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। অস্বস্তিকর বিষয়গুলোতে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেয়া না হলে তা দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে বলে উভয় দেশ মনে করে। বৈঠকে দুই দেশ অব্যবহৃত সম্ভাবনা উন্মোচনে নিয়মিত কূটনৈতিক ও খাতভিত্তিক যোগাযোগের গুরুত্ব স্বীকার করে।

পাকিস্তান ’৭১-এর অপরাধের ক্ষমা চাওয়ার পরও দেশটির সাথে শত্রুতা বজায় রাখা ঠিক নয়। এতে আমাদের কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশের সম্ভাবনা দাবিয়ে রাখার নীতি মূলত আত্মঘাতী। একটি মহল এখনো যেকোনো উপায়ে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নে বাধা দিতে চায়। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশ। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক রক্ষা করা জাতীয় স্বার্থেই জরুরি।