ড. মো: ইলিয়াস হোসেন
আমিষ জাতীয় খাবারের মধ্যে ডিম অন্যতম পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও সহজলভ্য। এটি শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী। ১৯৯৬ সালে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক এগ কমিশনের উদ্যোগে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ পালনের প্রচলন করা হয়। বাংলাদেশেও দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়। এ বছর ডিম দিবসের স্লোগান ‘ডিমে আছে প্রোটিন, ডিম খাই প্রতিদিন’। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হলো ডিমের পুষ্টিগুণ স¤পর্কে মানুষকে সচেতন করা, নিয়মিত ডিম খেতে উদ্বুদ্ধ করা, ভ্রান্ত ধারণা দূর করা এবং ডিম উৎপাদনে জড়িত খামারি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দেয়া।
ডিমের পুষ্টিগুণ ও মানবদেহে এর ভূমিকা
ডিম একটি সম্পূর্ণ পুষ্টিকর খাবার, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে। একটি ডিমে প্রায় ৭৭ কিলোক্যালরি শক্তি থাকে, যা দীর্ঘ সময় শক্তি জোগায় ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডিমে ৬.৩ গ্রাম উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ গঠন, ক্ষয়পূরণ, ত্বক, চুল ও টিস্যু পুনর্গঠনে সহায়ক। এর আয়রন শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, ভিটামিন এ চোখ ও ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে এবং রাতকানা প্রতিরোধে সাহায্য করে, ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁত মজবুত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ডিমের কুসুম নিয়ে ভুল ধারণা
অনেকে মনে করেন ডিমের কুসুমে বেশি কোলেস্টেরল থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে হৃদরোগ বা রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকা ব্যক্তিদের জন্য। একসময় পরামর্শ দেয়া হতো কুসুম বাদ দিয়ে শুধু ডিমের সাদা অংশ খেতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না এবং এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায় না। বরং প্রতিদিন কুসুমসহ একটি ডিম খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর।
বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য ডিমের গুরুত্ব
শিশু : এক বছর বয়সের পর শিশুদের ডিম খাওয়ানো শুরু করা যায়। ডিমের উচ্চমানের প্রোটিন শিশুর শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে। কুসুমে থাকা কোলিন মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্ব¡পূর্ণ। ভিটামিন ডি, এ, ই ও আয়রনসহ অন্যান্য পুষ্টি শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়ক। এক বছর বয়স থেকে দিনে একটি, তিন বছর বয়স থেকে দিনে দু’টি ডিম খাওয়া যেতে পারে।
কিশোর : কৈশোরে শরীরের পুষ্টি চাহিদা বেড়ে যায়। হরমোন ও এনজাইমের কার্যকারিতা উন্নত রাখতে এবং লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়াতে ডিম গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সে দিনে দু’টি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
প্রাপ্তবয়স্ক : কাজের কারণে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ডিম দ্রুত পুষ্টি ও এনার্জি সরবরাহ করে। প্রাপ্তবয়স্করা কুসুমসহ দিনে দু’টি ডিম খেতে পারেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব : এই সময়ে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ পরিবর্তন আসে এবং পুষ্টি চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কারণ, শরীরের ভেতর যে ক্ষয় হয়, সেটা আর তখন পূরণ হয় না। তাই ক্ষয় প্রতিরোধ ও পুষ্টি পূরণের জন্য বয়স্কদের খাদ্য তালিকায় দিনে দু’টি ডিম রাখা উচিত।
গর্ভবতী মা : গর্ভাবস্থায় পুষ্টি চাহিদা বেড়ে যায়। ভ্রণের সঠিক গঠন ও বিকাশের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন। ডিমে ফলেট, কোলিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় গর্ভবতী মা দিনে দু’টি ডিম খেলে পুষ্টি চাহিদার অনেকটাই পূরণ করতে পারেন এবং ভ্রণের সুস্থ বিকাশে সহায়ক।
লেখক : প্রফেসর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়