ড. আবু বকর রফীক
সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি খবর চট্টগ্রামবাসীর জন্য প্রচণ্ড মনোপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বীর চট্টলার দুই নম্বর রেলগেটের অদূরে বিদ্যমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিপ্লব উদ্যানটি কোনো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘদিনের জন্য ইজারা জিতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করবে এবং বিনিময়ে চসিকের কিছু বাড়তি আয় হবে।
এই খবর পড়ে চট্টগ্রামবাসী অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছে। কারণ, এই বিপ্লব উদ্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতির ধারক। আর সেটি ধ্বংস করতে যাচ্ছেন যে বর্তমান চসিক মেয়র তিনি সেই শহীদ জিয়ার দল জাতীয়তাবাদী দলের একজন বলিষ্ঠ নেতা।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই বিপ্লব উদ্যান থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন। সেই বিদ্রোহ ঘোষণার মহান স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ১৯৭৯ সালে শহীদ জিয়ার শাসনামলে এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়। এমন এক মহান ও ঐতিহাসিক স্মৃতির সাক্ষ্যকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার জন্য ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে আসছিল। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনামলে চট্টগ্রামের দু’জন মেয়র- আ জ ম নাসির ও রেজাউল করিম এ উদ্যানে বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তোলার প্রয়াস চালান। কিন্তু তাতে সফল না হলেও তারা উদ্যানের স্মৃতিফলক ইত্যাদি ধ্বংস করে দেন।
চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পর দেশ যখন হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত, তখন স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিবাসীরা আশা করেছিল, এবার হয়তো বিপ্লব উদ্যানটি তার আগের ঐতিহ্য ও অবস্থান ফিরে পাবে। এ আশাবাদ আরো জোরদার হয় দু’টি কারণে। ১. বর্তমানে সিটি মেয়র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার একনিষ্ঠ অনুসারী বলে খ্যাত এবং বিএনপির প্রথম কাতারের নেতা। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেও তার সুখ্যাতি আছে। তা ছাড়া মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি ঘোষণাও দেন যে, বিপ্লব উদ্যান সার্বিকভাবে দখলমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন।
বিপ্লব উদ্যান শুধু ঐতিহাসিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। নগরীর চকবাজার থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিদ্যমান এটিই একমাত্র উদ্যান, যা নগরবাসীর ব্যস্ত জীবনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে দিবস সায়াহ্নে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার এবং সিনিয়র সিটিজেনদের দেখা-সাক্ষাতের মিলনকেন্দ্র হিসেবে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষায় ভ‚মিকা রাখে।
এমন বাস্তবতায় বিপ্লব উদ্যানে নতুন করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগের খবর শুনে সবাই যারপরনাই অবাক হন। কারণ, চসিক মেয়র ও বিএনপি নেতা ডাক্তার শাহাদাত হোসাইনের হাতেই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে শহীদ জিয়ার স্মৃতিধন্য বিপ্লব উদ্যান। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ যা পারেনি তাই সম্পন্ন হচ্ছে বিএনপি নেতার হাতে, এর চেয়ে আশ্চর্যের আর কী হতে পারে!
আমরা এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবস্থান জানতে আগ্রহী। যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়েও থাকে, তাহলে জনস্বার্থে তা প্রত্যাহারের উদাত্ত আহ্বন জানাই।
লেখক : আইআইইউসির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর