চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন দিগন্ত

লালদিয়া টার্মিনাল বদলে দেবে দেশের অর্থনীতির চিত্র

সামগ্রিকভাবে, লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের রফতানি আয় বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসবে।

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল |সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরে সূচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। ডেনমার্কের বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘এপিএম টার্মিনালস’-এর সাথে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তিকে দেশের লজিস্টিকস খাতের জন্য একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ উদ্যোগের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর অচিরেই বিশ্বমানের আধুনিক ও স্মার্ট বন্দরে রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মালিকানা অক্ষুণ্ণ রেখেই বিশ্বমানের সেবা : লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) একটি চমৎকার উদাহরণ। এর ইতিবাচক দিকটি হলো—প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে বিদেশী অপারেটর, অথচ টার্মিনালটির নিরঙ্কুশ মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ সরকারের হাতেই। চুক্তি অনুযায়ী, নির্মাণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিচালনার পর একটি পূর্ণাঙ্গ ও সচল আধুনিক টার্মিনাল রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের কোনো অর্থ ব্যয় না করেই দেশ পেতে যাচ্ছে একটি অত্যাধুনিক স্থাপনা।

অর্থনীতির চাকা হবে আরো গতিশীল : গবেষণা বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন দেশের অর্থনীতির জন্য এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করবে। বর্তমানে পণ্য খালাসে যে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে, এই টার্মিনাল চালু হলে তা নাটকীয়ভাবে কমে আসবে। বিশ্বমানের অটোমেশন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কনটেইনার জট কমবে এবং পণ্য পরিবহনের গতি বাড়বে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও ভাবমূর্তি—দুটোই উজ্জ্বল হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তৈরি পোশাক শিল্পসহ রফতানি খাতের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ। লিড টাইম (Lead Time) কমে আসার ফলে ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ আরো নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

ভিয়েতনামের সাফল্যের পথে বাংলাদেশ : অর্থনীতিবিদরা ভিয়েতনামের ‘কাই মেপ’ বন্দরের সাফল্যের উদাহরণ টেনে বলছেন, বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে। বিদেশী পেশাদার অপারেটরদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ভিয়েতনামের বন্দর যেমন এক দশকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বন্দরে পরিণত হয়েছে, লালদিয়া টার্মিনালও চট্টগ্রাম বন্দরকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি কেবল একটি টার্মিনাল নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত হাতিয়ার।

আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ : বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ চুক্তি কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং বন্দর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্বের নতুন সংস্কৃতি চালু করবে। সনাতন পদ্ধতির বদলে ডেটা-ভিত্তিক আধুনিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের ফলে ব্যবসায়ীরা দ্রুততম সময়ে সেবা পাবেন।

সামগ্রিকভাবে, লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের রফতানি আয় বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসবে।