নানারকম জটিলতা ও সমস্যার আবর্তে জড়িয়ে আছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৬ বছর একই পদে চাকরি করেও শিক্ষকদের একটি বড় অংশ প্রমোশন জটিলতার কারণে সহকারী শিক্ষক থেকে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ব্যাচভিত্তিক গ্রুপিং ও বিভাজন সৃষ্টি করে একশ্রেণীর অসাধু শিক্ষক নেতা একের পর এক মামলা ঋজু করে পদোন্নতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করছে। শিক্ষকদের থেকে ব্যক্তিগত সুবিধাও নিচ্ছেন অনেকে।
নিয়োগসংক্রান্ত নানা জটিলতাকে কারণ বানিয়ে ২০১১ সালের নিয়োগকৃত শিক্ষকদের শিক্ষকতার আট বছর পূর্তিতে শূন্যপদ সাপেক্ষে মোট শিক্ষকের ৫০ শতাংশকে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার কথা থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এখনো সেটি চূড়ান্ত করতে পারেনি। মূলত তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। নীতিনির্ধারক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জটিলতা নিরসনে তাদের অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালের নিয়োগকৃত শিক্ষকদের দুই ধাপে পদায়ন করেছে। সুতরাং এর সমাধান তাদেরই করতে হবে।
দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে সরকারের প্রতি শিক্ষকদের ক্ষোভ বাড়বে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে চারস্তরের একাডেমিক পদসোপানের দাবি জানিয়ে আসছেন। এন্ট্রিপদ হিসেবে সহকারী শিক্ষকদের পদটি নবম গ্রেডে উন্নীত করারও দাবি শিক্ষকদের।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদ ও পদবির দ্রুত পরিবর্তন, পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাকটরসহ অতীতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সমপর্যায়ের বিভিন্ন পদে নতুনভাবে বিন্যস্তকরণের মাধ্যমে পদমর্যাদাগত ও অবস্থানগত যে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তাতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড ধরে চার স্তরবিশিষ্ট পদসোপান তৈরি করা খুবই যৌক্তিক।
পদ্ধতিগত নানা ভুলের মধ্য দিয়ে চলছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার বিপুল বাণিজ্যিকীকরণে উৎসাহ জোগাচ্ছে। কিছু অসাধু শিক্ষক জড়িয়ে পড়ছেন কোচিং-বাণিজ্যের সাথে। তাদের অর্থ লিপ্সাও বাড়ছে ক্রমাগত। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। যেমন : ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষাভিত্তিক প্রমোশন পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে প্রমোশনে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। এটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হলে কোচিং-বাণিজ্যের দৌরাত্ম্য থেকে বেরিয়ে অনেকেই পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগী হবেন। ব্যাচভিত্তিক শতভাগ প্রমোশন পদ্ধতি চালু থাকার কারণে এমন সব লোক প্রশাসনে বসছেন যাদের শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। এতে শিক্ষার পরিবেশও ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষকদের অবশ্যই পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন ও একাডেমিক কার্যক্রমের দিকে ফেরাতে হবে।
শিক্ষার সাথে গবেষণার সম্পর্ক নিবিড়। যুগের পর যুগ মাধ্যমিক স্তর এই উপলব্ধি থেকে উপেক্ষিত থেকে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, এক শ্রেণীর দুর্নীতিপ্রবণ শিক্ষকদের কারণেই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এই জায়গা থেকে অন্য দিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তারা নিজেরা ভাবছেন না, কর্তৃপক্ষকে ভাবার সুযোগও দিচ্ছেন না।
পদ ও পদোন্নতির পরবর্তী উচ্চতর ধাপে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে যদি এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়, তা হলে এটি মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর ফল দিতে পারে। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে মাধ্যমিক শিক্ষকদের মধ্য থেকে উঠে আসা দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকদের পদায়ন করা হলে তারা যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে মাধ্যমিকের আগামীর পথচলা আরো সহজতর করবেন।
লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট



