জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক, সমঝোতার বিকল্প নেই

আমরা আশা করতে চাই, আওয়ামী লীগের পরিণতি বিবেচনায় রেখে বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের রাজনৈতিক পথরেখা তৈরি করবে। বোঝাপড়ার বা সমঝোতার রাজনীতি গ্রহণ করবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিতর্ক এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছে একটি দল। আরেকটি দল সনদ নিয়ে নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে অনড়। কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচন এবং তার আগে গণভোট আয়োজন কতটা সম্ভব সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। এ দিকে সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন সেরে ফেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনকি নির্বাচনও অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন কেউ কেউ।

এমনিতেই নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের ঝুঁকি আছে। পতিত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল এবং তাদের মদদদাতা বৃহৎ শক্তি যেকোনো মূল্যে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে- এমন গুঞ্জন আছে মিডিয়াতেই। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা বড় ধরনের আক্রমণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। এমন একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচন যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সবার সতর্কতা জরুরি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব বেশি। কারণ দেশ পরিচালনা তারাই করবেন।

জুলাই সনদ তথা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করতে সরকার এরই মধ্যে বিপুল প্রয়াস নিয়োগ করেছে। দীর্ঘ সাত-আট মাস ধরে দলগুলোর সাথে আলোচনা চালিয়েছে, সেগুলো সমন্বয় ও নথিবদ্ধ করেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে যা হলো তাতে তারা আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না বলে মনে হয়। এর লক্ষণ হলো- জুলাই সনদের চূড়ান্ত দলিলে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট গায়েবের অভিযোগ এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর এটি আপনাআপনি বাস্তবায়ন হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থার সংযোজন।

তবে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। আর সেটি হতে হবে ডিসেম্বরের আগেই। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন হতে হলে ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কয়েকজন উপদেষ্টা শেষ মুহূর্তের আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছেন। তাতে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ফল আসতেই হবে। গায়ের জোরে দাবি আদায়ের রাজনীতি জনগণ আর দেখতে চায় না। দাবিদাওয়ায় ছাড় দিয়ে হলেও সমঝোতা হোক, এটিই সবার প্রত্যাশা। সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় কোন দলটি বেশি নমনীয় দেশবাসী সে দিকেও খেয়াল রাখছে। অধিকতর নমনীয় দল নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচনে এরও একটি সুফল পাবে। কারণ গত ৫৪ বছরের রাজনীতিতে দেশে একটি রাজনৈতিক সঙ্কটেরও সমাধান সমঝোতার ভিত্তিতে হয়নি। কাজেই যারা উদারতার নজির রাখবেন, জনগণ তাদের নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবে।

যতদূর জানা যায়, প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি মাত্র দু’টি প্রশ্নের ওপর নির্ভর করছে। বিএনপির দিক থেকে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মেনে নেয়া এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে গণভোট এবং নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি থেকে সরে আসা।

আমরা আশা করতে চাই, আওয়ামী লীগের পরিণতি বিবেচনায় রেখে বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের রাজনৈতিক পথরেখা তৈরি করবে। বোঝাপড়ার বা সমঝোতার রাজনীতি গ্রহণ করবে।