সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গভীর বিবেচনায় নেয়া উচিত

কমিশন আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একমত হতে পারবে। আমাদেরও প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থ একপাশে সরিয়ে রেখে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এবং দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছবে। দলগুলোকে বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।

গত দেড় দশকে দেশে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ কায়েম করে মর্জিমাফিক দুঃশাসন চালান। চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে দেশবাসী ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি পান। ফ্যাসিবাদী জমানায় ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামো গঠনে যাতে জুলাই অভ্যুত্থান সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, সেজন্য এর আইনি ভিত্তি দরকার। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ উপলক্ষে গঠিত সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে জুলাই সনদের খসড়া প্রস্তুত করে মতামতের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। তবে এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়ে গেছে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং পরবর্তীতে গণভোটের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর সাংবিধানিক বিধানগুলো কার্যকরের প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন বলছে, আইনি বিশেষজ্ঞদের প্যানেল প্রস্তাব করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের ২২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে একটি ‘সাংবিধানিক আদেশ’ জারি করতে পারে, যেখানে জুলাই সনদে উল্লিখিত মৌলিক সংস্কারগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। পরবর্তীতে এ সাংবিধানিক আদেশের ওপর আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হতে পারে। সাংবিধানিক আদেশে গণভোটের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যদি গণভোটে জনগণের অনুমোদন পাওয়া যায়, তা হলে সাংবিধানিক আদেশ জারির তারিখ থেকে সেটি বৈধতা পাবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে ধরেন। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি।

প্রস্তাবিত জুলাই সনদের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যমান সংবিধান এবং সব রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার আইনসম্মত উপায়ে সম্পন্ন করার অভিপ্রায় প্রকাশ করছে। এর উদ্দেশ্য হলো- সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

এর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারসহ জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠায় কমিশন। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধন করে এ সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে। অন্য দিকে কয়েকটি দল বলছে, সংবিধান সংস্কার কেবল নির্বাচিত সংসদ করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তিন দফা সংলাপেও ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। গত বুধবার আবারো বৈঠকে বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে আগামী এক মাসের মধ্যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পাশাপাশি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংবিধানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যাবে, তা যেন সরকার দ্রুত সম্পন্ন করে, সে পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

কমিশন আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একমত হতে পারবে। আমাদেরও প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থ একপাশে সরিয়ে রেখে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এবং দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছবে। দলগুলোকে বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।