পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার একটি ত্রুটিপূর্ণ দিক হলো এখানে কেউ অট্টালিকায় বাস করে আর কেউ থাকে গাছতলায়। অট্টালিকায় বাস করা মানুষ আধুনিক সমাজের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও বস্তির মতো জায়গায় বাস করা মানুষ এসব বঞ্চিত থাকে। সমাজের উঁচুতলার মানুষ বস্তিবাসীর নানা সহযোগিতায় বেঁচে থাকে। কিন্তু তাদের জীবনমান উন্নয়নে লক্ষণীয় কিছু করে না। আবার সমাজের একটি শ্রেণী বস্তিকে কেন্দ্র করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করে। ফলে বস্তির মানুষের জীবন হয় নানা দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ।
রাজধানীর কড়াইল বস্তি ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীর মাঝখানে অবস্থিত। গতকাল বস্তিটিতে আগুন লাগার ১৬ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় নিভানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুসারে, বস্তির এক হাজার ৫০০ ঘর পুড়ে গেছে। আর এতে করে খোলা আকাশের নিচে এখন তাদের থাকতে হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এ নিয়ে গত ১১ মাসে এই বস্তিতে তিনবার আগুন লেগেছে। এর আগে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বস্তিটিতে আগুন লাগে। তখন ৬১টি ঘর পুড়ে যায়। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর আগুন লাগে। তখনো বেশ কয়েকটি ঘর পুড়ে গেছে। এর আগেও বহুবার এই বস্তিতে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। শত শত ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বস্তির নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের। বস্তিবাসীর অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদ করতে এই আগুন দেয়া হচ্ছে।
কড়াইল বস্তি সরকারি জায়গায়। এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে প্রভাবশালী চক্রের হাতে। তারা ঘরভাড়া নেয় ও চাঁদাবাজি হয় এখানে। বাসাবাড়ি ভস্মীভূত করে উচ্ছেদ করলে তাদের কাজে সুবিধা হয়। কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। এর সাথে অশুভ চক্রের সম্পৃক্ততা পেলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বস্তিবাসী অভিযোগ করেছে, ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে। এর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে।
সমাজের আয়বৈষম্য প্রকট হলে বস্তির মতো জায়গায় মানুষের বসবাস বেড়ে যায়। বস্তিতে বাস করে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটে না। জাতিসঙ্ঘের মতে, মৌলিক চাহিদা মেটাতে আবাসনে একজন ব্যক্তির ন্যূনতম ৯৭ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু কড়াইল বস্তিতে গড়ে প্রতি ৪৯ বর্গফুট জায়গায় একজন মানুষ বাস করে। বস্তিবাসী মানবেতর জীবনযাপন করে।
আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে ধনীরা বিনা বাধায় আরো সম্পদশালী হচ্ছেন। আর নিম্ন আয়ের অসচ্ছল মানুষকে পদে পদে বাধা ও বঞ্চিত করা হচ্ছে। ঢাকার বস্তিগুলোয় ঘন ঘন আগুন লাগা তারই নমুনা। এর একটা বিস্তারিত তদন্ত হওয়া দরকার।
বস্তির জীবন চিরস্থায়ী কোনো জীবন নয়। এখানকার মানুষকে সমাজের মূল ধারার সচ্ছল মানুষের সমপর্যায়ে আসতে হবে। এজন্য বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষের যেমন চেষ্টা থাকতে হবে। সাথে সাথে সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।



