চার হাজার টন উৎপাদনের আশা, ফসলে ভরে যাবে মাঠ

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মাত্র একটি স্লুইসগেট হলে অতিরিক্ত চার হাজার টন ফসল উৎপাদন হতে পারে। একটি সহযোগী দৈনিকের আনোয়ারা সংবাদদাতা জানান, আনোয়ারা উপজেলার কান্দরিয়া খালের মুখে নির্মিতব্য স্লুইসগেট প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কয়েকটি গ্রামের মানুষ তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে বলে আশা করছেন। কারণ এর ফলে এক হাজার হেক্টরের বেশি জমি চাষের আওতায় আসবে। এতে অতিরিক্ত প্রায় চার হাজার টন ফসল উৎপাদন হতে পারে।

প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী মাসে শুরু হবে। পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অক্টোবর অর্থবছরে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের কান্দরিয়া খালের মুখে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০২০ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর স্লুইসগেটটি চালু হয়। ২০২১ সালেই জোয়ারের স্রোতে গেটের পাশের মাটি সরে দেবে যায় স্লুইসগেট। দিনে দুইবার জোয়ারের পানি ওঠানামা করার সময় স্লুইসগেটটি তলিয়ে যায়। এভাবে দুই পাশের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে ক্ষেত-খামার ভেসে যায়। ফলে গত তিন বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের দাবি, স্লুইসগেট নির্মাণের পর পানি নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপারেটর নিয়োগ করতে হবে। না হলে পাউবোর কোটি কোটি টাকা অপচয় হবে।

পাউবোর তত্ত্বাবধানে নির্মিতব্য ৮০ মিটার দীর্ঘ ও ৪৫ মিটার চওড়া এ স্লুইসগেটে থাকছে সাড়ে ১০ মিটারের ছয়টি রেগুলেটর। সাথে তৈরি হবে সংযোগ সড়ক।

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্লুইসগেটটি নির্মিত হলে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের এক হাজার ২০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। এতে প্রতি বছর অতিরিক্ত তিন হাজার ৭৬৩ দশমিক ৮ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের উচ্চতা বাড়ার মাধ্যমে প্রকল্পসংলগ্ন হাজার হাজার পরিবারের সুপেয় পানির সঙ্কটও দূর হবে।

আগের স্লুইসগেট ভেঙে পড়ায় তিন বছর ধরে কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতে নৌকাই ছিল ভরসা। দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে শিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসা সবই করতে হয় নৌকায়। এবার তাদের সেই কষ্ট দূর হতে যাচ্ছে। সিংহরা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘স্লুইসগেট ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কয়েক বছর কষ্টে দিন কাটিয়েছি। পানি বাড়লেই রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, কৃষিজমি তলিয়ে যায়। নতুন স্লুইসগেট নির্মাণের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পত্তর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, ‘কান্দরিয়া খালে অত্যাধুনিক স্লুইসগেট নির্মাণের কার্যাদেশ সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আগামী মাসেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। এটি নির্মাণের মাধ্যমে আগামীতে পতিত জমিগুলো সেচ সুবিধা পাবে।’

আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এ জন্য বাংলাদেশের কৃষি জাগরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্লুইসগেটের কারণে অতিরিক্ত চার হাজার টন ফসল উৎপাদন হলে কৃষি জাগরণে সাড়া পড়বে। চট্টগ্রামের আনোয়ারার মতো অন্য স্থানেও কৃষি জাগরণে উদ্যোগ নেয়া দরকার। যাতে কোনো স্থান পতিত না থাকে। এ বিষয়ে সরকারের মনোযোগ দরকার।