নির্বাচন ঘিরে টার্গেট কিলিং, কঠোর পদক্ষেপ নিন

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল। একপ্রকার অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আবার যেন কিছুটা অবনতি হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের কিছু অঞ্চলে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত আট দিনের ব্যবধানে সারা দেশে ৩০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খোদ রাজধানীতেই গত ১০ মাসে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। প্রতি মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গড়ে ২০টি। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের তথ্যমতে, রাজধানীতে মাসে গড়ে ১৯-২০টি খুনসংক্রান্ত অপরাধ ঘটে। পারিবারিক কলহ, পূর্বশত্রুতার জের, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক কারণেও খুনের ঘটনা ঘটে। অবশ্য আশার দিক হলো- এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে।

অন্তর্বর্র্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য সারা দেশে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের সময় খোয়া যাওয়া অস্ত্রগুলো এখনো সব উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যৌথবাহিনীর অভিযানের পরও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়াটা দুঃখজনক। ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভঙ্গুর ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা সারা দেশে সন্ত্রাস দমনের জন্য ২০০২ সালে যৌথবাহিনীর যে অভিযান পরিচালনা করেছিল, তাতে জনমনে একপ্রকার স্বস্তি নেমে এসেছিল। যদিও সে অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। জনমনে স্বস্তি এনে দেয় এমন একটি যৌথ অভিযান চালাতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

এক দিকে অন্তর্বর্তী সরকার যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করেছে, অপর দিকে একের পর এক দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে বের হয়ে আবারো হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য অপরাধে সম্পৃক্ত হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পতিত স্বৈরাচারের প্রধান টার্গেট আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা। সে লক্ষ্যে তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর নানা অপচেষ্টা চালাবে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরও তারা এ কাজে লাগাবে। সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কোনোভাবেই যাতে অবৈধ অস্ত্র অপরাধীদের হাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের অপরাধ দমনে তাৎক্ষণিক অভিযানে হয়তো সফলতা আসবে; কিন্তু তাতে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে না। মানুষ যাতে অপরাধী হয়ে না উঠতে পারে, রাষ্ট্রকে দীর্ঘ মেয়াদে সে পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে কেউ একবার অপরাধ করার পর পরেরবার যাতে আর অপরাধে না জড়ায়, রাষ্ট্রকে সে দিকেও নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুইডেন ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলোর ধারা অনুসরণ করা যেতে পারে।