শেখ হাসিনা গত সাড়ে ১৫ বছরে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। অবস্থা এমন যে, লুটেরা শ্রেণী লুটের টাকায় কানাডায় রীতিমতো বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সুফল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক পতন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ কথা ঠিক যে, দেশ থেকে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা উদ্ধারে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালানো হলেও এখনো তেমন কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।
এবার পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, ১২ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল অঙ্কের অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১২টি আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কাজের মাধ্যমে এটি সহজে অনুমেয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে কার্যকর কোনো অ্যাসেট রিকভারি প্রতিষ্ঠান নেই। এ কারণে বিদেশভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা দেবে, যার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ খুঁজে বের করে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, যেসব গ্রাহক জালিয়াতি ও ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, তারা একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ জরুরি।
এনডিএ (নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতোমধ্যে কিছু প্রাথমিক আলোচনাও সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সম্পদ উদ্ধারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক চাইলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করতে পারবে।’ স্মরণযোগ্য যে, এর আগে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ শুরু করেছিল। এসব সংস্থা ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং বিদেশী আদালতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে দেশের ব্যাংক নির্বাহীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করতে পারে, তাহলে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের সুবিধা পাবে। সেই সাথে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এটি একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
ব্যাংকারদের মতো আমরাও মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ না করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। ব্যাংকগুলো যদি আন্তর্জাতিক ল’ ফার্ম ও অ্যাসেট রিকভারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে পারে, তাহলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো সম্ভব হবে।