সামাজিক সব সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা, নতুন করে শুরু করতে হবে

আগামীর সরকারকে জাতীয় উন্নয়নের কার্যক্রম বলা চলে, আবারো নতুন করে শুরু করতে হবে।

গত সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনে সামাজিক অগ্রগতির প্রায় সব সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এতদিন পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস-সহ সব সরকারি নথিপত্রে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হলেও সেগুলোর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নতুন জরিপে।

গত রোববার ঢাকায় প্রকাশিত বিবিএস ও ইউনিসেফের যৌথ জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে এমন ধারণা পাওয়া যায়। এ জরিপের গুরুত্বপূর্ণ যে উদঘাটন তা হলো- দেশের প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে চারজনের রক্তে উদ্বেগজনক সিসার উপস্থিতি। এ ছাড়াও নানা বিষয়ের সবশেষ তথ্য এতে উঠে এসেছে। যেমন এক বছর থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৮ শতাংশ এবং অন্তঃসত্ত¡া নারীদের প্রায় ৮ শতাংশের দেহে সিসা নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি। রক্তে সিসার উচ্চমাত্রার কারণ শিল্পকারখানা, অনিয়ন্ত্রিত রিসাইক্লিং ও বিপজ্জনক পণ্যের ব্যবহার।

সিসাদূষণের পরিণাম মারাত্মক। এতে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ রুদ্ধ হয়। আমাদের ৪০ শতাংশ শিশু অনেকটা নির্বোধ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ এক ভয়ানক উদ্বেগজনক তথ্য। কারণ বুদ্ধিহীন প্রজন্ম আর্থসামাজিক অগ্রগতি শুধু পিছিয়ে দেবে না, জাতির জন্য দুর্বহ বোঝা হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে জাতীয় উন্নয়নের জন্য ‘রেড ফ্ল্যাগ’ বা ‘চরম বিপদসঙ্কেত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের শেখার মৌলিক দক্ষতায় দুর্বলতা আছে। ৭-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মাত্র অর্ধেক মৌলিক পাঠ দক্ষতা এবং ৪০ শতাংশের কম মৌলিক গণিত দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

খাবার পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতার সুবিধা যথেষ্ট হলেও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত ৮০ শতাংশের বেশি পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে, যা গুরুতর ঝুঁকি নির্দেশ করে। উৎস পর্যায়ে পানিদূষণ প্রায় ৪৭ শতাংশ। এমনকি পারিবারিক পর্যায়ে হাত ধোয়ার সুবিধাও আগের চেয়ে কমেছে। ১৫-১৯ বছরের কিশোরী বিয়ের হার বেড়েছে। ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের প্রায় অর্ধেকের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরে পা দেয়ার আগে।

সামাজিক অগ্রগতির যে রঙিন চিত্র এতদিন জাতির সামনে তুলে ধরা হতো; তা ছিল প্রতারণামূলক। তার স্বীকৃতি পাওয়া গেল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, দেশের অন্যতম সমস্যা খাদ্যদূষণ। বিবিএস-ইউনিসেফের এ জরিপে সেই খাদ্যদূষণজনিত বিরূপ প্রভাবের চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আগের তথ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি ছিল। বিশেষ করে বাল্যবিয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন ছিল।

মূলত জাতিকে সব দিক থেকে পঙ্গু করে দেয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়েছে গত সাড়ে ১৫ বছরের বিদেশী মদদপুষ্ট শাসকগোষ্ঠী। এ ষড়যন্ত্রের কুফল কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে; কিন্তু এ জন্য সতর্কতার সাথে সামনে পা ফেলতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক গণমুখী সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া এ মুহূর্তে জাতির প্রধান কর্তব্য। পূর্ণ সজাগ থাকতে হবে, যেন বাইরের মদদ নিয়ে কোনো শক্তি জনগণের কাঁধে ফ্যাসিবাদী শাসনের জোয়াল আবার চাপিয়ে দিতে না পারে।

আগামীর সরকারকে জাতীয় উন্নয়নের কার্যক্রম বলা চলে, আবারো নতুন করে শুরু করতে হবে।