বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ও নির্যাতনে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনা থামছে না। অথচ নানা সময় বাংলাদেশ-ভারতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের সম্মেলনে উভয় দেশ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে একমত হলেও তার কার্যকারিতা দেখা যায় না; বরং দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ মৃত্যুর জন্য বিএসএফ দায়ী।
সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ কিংবা হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ভারতের তরফ থেকে এসেছে বহুবার। নানা সময় উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের সম্মেলনে দুই দেশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে একমত হলেও সীমান্তে তার কার্যকারিতা দেখা যায় না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো আন্তরিকতা ভারতীয় পক্ষের নেই। ফলে সীমান্তে বন্ধ হচ্ছে না বিএসএফের গুলি, থামছে না বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা। বাস্তবে সীমান্ত হত্যা যেন প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে।
দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। সীমান্তে যারা জীবন হারাচ্ছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরাও বলছেন, কেউ নিয়ম ভাঙলে প্রচলিত আইন প্রয়োগ করা মানবাধিকার। সঙ্গত কারণে গুলি করে প্রাণহানির মতো ঘটনা এড়ানোর দাবি তাদের।
সীমান্তে যে গুলি বন্ধ হয়নি, তা সাদা চোখে যে কারো কাছে ধরা পড়বে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে সীমান্তে প্রাণ গেছে ৩০ জনের। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মারা যান ২৫ জন। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়া একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গত ছয় মাসে সীমান্তে ২৭ বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের গুলি এবং তাদের হাতে শারীরিক নির্যাতনে এ মৃত্যু ঘটে। এ বছরের মার্চ মাসে তিনজন, এপ্রিলে পাঁচজন, মে মাসে তিনজন, জুনে দু’জন, জুলাইয়ে আটজন এবং আগস্ট মাসে ছয়জনকে হত্যা করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়ে ঝুলে থাকা বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীর ছবি এখনো গেঁথে আছে আমাদের সবার হৃদয়পটে। ওই নির্মম ঘটনা দেশ-বিদেশে তৈরি করেছিল ব্যাপক চাঞ্চল্য।
আমাদের জানা মতে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়া পৃথিবীর এমন কোনো প্রতিবেশী দেশ নেই, যে সীমান্তে এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। অতীতে দেখা গেছে, বিএসএফ সীমান্তে গুলি চালিয়ে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা করেছে। আর ঢাকা এর কাগুজে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এতে কার্যকর কোনো ফল আসেনি।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ভারতের তাঁবেদার শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বর্তমানে যেহেতু দেশপ্রেমিক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, তাই এখন জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অবৈধভাবে কোনো গুলি চালাতে না পারে। এটি নিশ্চিত করতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে। এর জন্য আর কাগুজে প্রতিবাদ নয়, চাই কার্যকর পদক্ষেপ।