সংশোধিত নির্বাচনী আচরণবিধি, অংশীজনের পরামর্শ আমলে নিন

শেখ হাসিনার জমানায় দেশে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। গত দেড় দশকে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে, তা ছিল মূলত তামাশা। সেই থেকে ভোটাররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন, কবে দেশে আবার উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ হারালে জাতিকে চড়া মূল্য দিতে হবে। এ কথা মনে রেখে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব অংশীজনকে কাজ করতে হবে।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এক দিনে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ করছে। চার দিনে ৪৮টি দলের সাথে সংলাপ করেছে ইসি।

নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে পালন করে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে দলগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়াই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে ইসি। নির্বাচনী আচরণবিধিতে শাস্তির বিধান স্পষ্ট নয়। আচরণবিধি যত সাদামাটা হবে, তার পরিপালনও তত সহজ হয়। কিন্তু আচরণবিধির এক স্থানে পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কথা আছে। পরে আবার বলা হয়েছে, পোস্টার সরানো যাবে না। বিধি ভাঙলে শাস্তির কথা বলা থাকলেও কে শাস্তি দেবে তার উল্লেখ নেই।

কোথাও বিধিমালা লঙ্ঘিত হলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি হবে। তদন্ত কারা করবে, তা বলা নেই। কমিশন প্রার্থিতা বাতিলের প্রক্রিয়া রাখলেও তা কিভাবে ও কত দিনের মধ্যে করবে, তারও উল্লেখ নেই। দলীয়প্রধানের ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি না রাখার বিধান হয়েছে। এ বিধান বাস্তবায়নে যথাযথ নজরদারি করার মতো জনশক্তি ইসির আছে কি না সেটিও প্রশ্ন। আচরণবিধি এমন হওয়া উচিত, যেন সেটি নিপীড়নমূলক না হয়ে দাঁড়ায়।

সংশোধিত আচরণবিধিতে নির্বাচনী প্রচারে পোস্টারের ব্যবহার বন্ধ ও বিলবোর্ডের ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রচারে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নির্বাচনী আমেজ তৈরিই হয় পোস্টারিং, মাইকিং, মিছিল ও জনসভার আয়োজনে। পোস্টার ব্যবহার না হলে ছোট দলগুলোর পক্ষে ভোটার ও মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এ জন্য পোস্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান, বৈধ অস্ত্র জমা এখনই নিতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে কালো টাকা, পেশিশক্তি ও অস্ত্রের প্রভাবমুক্ত থাকাটাও অত্যাবশ্যক। একই সাথে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন করতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে সামাজিক মাধ্যমের কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন জাতির কাছে সব দলের ওয়াদা। দেশবাসীকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে ওয়াদাবদ্ধ ইসি।

সঙ্গত কারণে আমরা মনে করি, সব অংশীজন বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নিয়ে আচরণবিধি পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।