গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনকালে দেশে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। শ্রমজীবীরাও নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেনি। নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের ঘটনা এর থেকে আলাদা নয়।
একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে জানা যায়, নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও সুবর্ণচরের ১৩ জন জেলে এক বছর ধরে নিখোঁজ। ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে তারা আর ফেরেননি। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তারা নিখোঁজ হন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের সন্ধান না পাওয়ায় স্বজনদের হাহাকার আজও ফুরায়নি।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন, হাতিয়ার তালুকদার গ্রামের হেলাল (৪২), ছালেহ উদ্দিন (৪৫), লিটন (৩৪), মিলাদ (৪৩), চরকৈলাশ গ্রামের আব্দুল মান্নান (৩৮), জাবের (৩৬), সাইফুল (৩৭), ফরাজী গ্রামের রকিব (৩৪), সুবর্ণচর উপজেলার আনছার মিয়ার হাটের গোলাম মাওলা (৪১) ও চরমজিদ গ্রামের মিরাজ (৩৮)। আরো তিন জেলে একই নৌকায় ছিলেন।
নিখোঁজের পরপরই কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সমুদ্র ও উপকূলজুড়ে অভিযান চালায়। কিন্তু তাদের সন্ধান মেলেনি। পরিবারগুলো এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না তাদের স্বজনরা জীবিত নাকি মৃত। ফরাজী গ্রামের জেলে রকিবের স্ত্রী রেশমা বেগম বলেন, প্রতিদিন মনে হয় স্বামী আজ হয়তো ফিরবে। সন্তানরা তাদের বাবার কথা জিজ্ঞেস করে। কিভাবে সংসার চালাব তার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না।
চরঈশ্বর ইউনিয়নের হেলালের মেয়ে শিল্পী বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন মনে হয় আমার বাবা আজ হয়তো ফিরবে। আমার মা-ও মারা গেছেন। আমার ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। আমরা জানতে চাই, তারা কি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।’
চরকৈলাশ গ্রামের সাজেদা বেগম বলেন, ‘স্বামী ছাড়া আমার সংসার চলে না। সন্তানদের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকারের কাছে মিনতি করছি, তারা বেঁচে আছে কি না অন্তত তা নিশ্চিত করা হোক।’
চরঈশ্বর গ্রামের বৃদ্ধ আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে ছালেহ উদ্দিনকে অন্তত একবার দেখতে চাই বেঁচে থাকলে দোয়া করি ফিরুক, তা না থাকলে লাশটা হলেও চাই।’
স্থানীয় সমাজকর্মী আশরাফ বলেন, ‘এটি শুধু ১৩টি পরিবারের নয়, পুরো হাতিয়ার বেদনা। এক বছরেও কোনো তথ্য না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’
হাতিয়ার নলচিরা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অশিষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘১৩ জেলে নিখোঁজের পর আমাদের নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে মেঘনা, বঙ্গোপসাগরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। এ ছাড়া স›দ্বীপ, মনপুরা, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বার্তা দিয়ে রেখেছি।’
বিগত সরকার দেশে স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছেন। এ কারণে কর্মপরিবেশ ছিল না। এর ফলে আমরা নির্মাণশ্রমিকদের করুণ মৃত্যু প্রত্যক্ষ করি। মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সমুদ্রগামী ট্রলার মাছ ধরায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তাদের কর্মপরিবেশ বহাল রাখতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। অন্যথায় তারা মাছ ধরতে পারবে না।