মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড ধসে প্রাণহানি, নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করুন

মেট্রোরেল জনবহুল ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থায় কিছুটা স্বস্তি এনেছে। খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন কোনো কারণে নগরবাসীর দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

রাজধানীতে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এ সময় ফুটপাথের একটি চায়ের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তাতে থাকা দোকানি ও দু’জন খদ্দের আহত হয়েছেন। ইতঃপূর্বে একটি একইভাবে প্যাড খুলে পড়লেও তাতে কেউ হতাহত হননি। মেট্রোরেল মেগা প্রকল্পগুলোর একটি। এ ধরনের নির্মাণে সর্বাধিক প্রাধান্য পায় নিরাপত্তার বিষয়টি। দুর্ঘটনার শঙ্কা কমাতে সব ধরনের ঝুঁকি মেটানো হয়। সে জন্য এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল ব্যয় হয়। রাজধানীর মেট্রোরেল নির্মাণে উচ্চ ব্যয় হয়েছে। তবু উপর্যুপরি বিয়ারিং খুলে পড়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ঢাকা একটি জনবহুল শহর। এখানে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা, বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। মেট্রোরেল প্রকল্পটি অদূরভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হবে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। বিয়ারিং খুলে পড়ায় নির্মাণগত ত্রুটি না ব্যবস্থাপনার গাফিলতি রয়েছে তা শনাক্ত করতে হবে।

ফার্মগেটের একই জায়গায় দু’বার এমনটি ঘটল। ওই জায়গায় রেলপথটি স্বাভাবিকের তুলনায় উঁচু। এর সাথে এখানে বড় বাঁক রয়েছে। যে কারণে স্থাপনাগত একটি নাজুক অবস্থা আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নির্মাণে উঁচু মানের নিরাপত্তা কৌশল অবলম্বন করা হয়। ব্যয় বাড়লেও নিরাপত্তায় কোনো দুর্বলতা রাখা হয় না। মেট্রোরেলে এতে কোনো ছাড় দেয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।

স্টিল ও রাবারের সমন্বয়ে তৈরি প্যাডটি বসানো থাকে পিলার ও রেলপথের সংযোগ স্থানে। কংক্রিটের দুটো বড় স্থাপনার মধ্যে ঘর্ষণে যাতে স্থাপনা ক্ষয়ে না যায় সে জন্য এ প্যাডের ব্যবহার। আলোচনায় এসেছে জাপানি প্রকৌশল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা। বিশ্বে সবচেয়ে নিখুঁত নির্মাণের রেকর্ড রয়েছে এদের। তাদের নির্মিত স্থাপনা এতই নিপুণ, ১০ লাখ স্থাপনার মধ্যে একটি ভুল হতে পারে। তার পরও এটি বাঁকা অংশে নকশাগত ত্রুটিতে ঘটে থাকতে পারে। আগে থেকে দুর্ঘটনার স্থানে এ কারণে রেলের গতি কমিয়ে ৩০-৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে রাখা হয়। এতে মেট্রোরেলে যে গতি থাকার কথা তা পাওয়া যাচ্ছে না।

পিলার ও রেলপথের সংযোগস্থলে চলাচলের সময় ঝাঁকুনি হয়। বিয়ারিং প্যাড স্থানচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়েছে এ ধরনের ঝাঁকুনিতে। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের আনতে এর মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেট্রোরেলের পুরো নকশাটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এতে কোনো ধরনের ত্রুটি রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। সাথে সাথে যাচাই করা দরকার নকশা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে কি না। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের সময় মেগা প্রকল্পগুলোতে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পটি নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। নির্মাণের ক্ষেত্রে তা কোনো ধরনের দুর্বলতার কারণ হয়েছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।

মেট্রোরেল জনবহুল ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থায় কিছুটা স্বস্তি এনেছে। খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন কোনো কারণে নগরবাসীর দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। পুনরায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগে এর সম্ভাব্য ত্রুটি-বিচ্যুতি সারিয়ে তুলতে হবে।