রাজধানীতে ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ আবারো কমে গেছে। অনেক এলাকায় দিনের বেলায় প্রায়ই গ্যাস থাকছে না। কোনো কোনো এলাকায় গত এক সপ্তাহ থেকে দেড় সপ্তাহ ধরে গ্যাস নেই। কোথাও বা মধ্য রাতে বা শেষ রাতে কিছু সময়ের জন্য গ্যাস আসে। গৃহিণীরা গ্যাসের অপেক্ষায় রাত জেগে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত। কিন্তু গ্যাসের দেখা মিলছে না। কোথাও গ্যাসের চাপ থাকে একেবারে কম। ফলে গৃহিণীরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য পরিস্থিতি গুরুতর। মধ্যবিত্তরা বিকল্প হিসেবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। অনেকে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছেন। যারা ঘরে রান্না করতে পারছেন না, তাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে, যা দৈনন্দিন ব্যয়ের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। আবার নিয়মিত গ্যাসের বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের।
পত্রিকান্তরের খবর, রাজধানীর শনির আখড়া, মাতুয়াইল, মোহাম্মদপুর, বসিলা, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, পশ্চিম আগারগাঁও, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, পশ্চিম ধানমন্ডি, লালবাগ, সোবহানবাগ, ইন্দিরা রোড, তাঁতীবাজার, শাঁখারিবাজার, কামরাঙ্গীরচর, উত্তরা, দক্ষিণখান, বনশ্রী ও রামপুরা এলাকায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট। এসব এলাকার কিছু বাসা-বাড়িতে মাঝে মধ্যে গ্যাসের কম চাপ দেখা গেলেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাসায় গ্যাস আসে না।
সব মিলিয়ে রাজধানীর বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তবে এখনো গ্যাসের দাবিতে রাস্তায় নামার ঘটনা ঘটেনি। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের সুবিবেচনার কারণে। নাগরিকরা জানেন, গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী সরকার দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ না দিয়ে কেবল নগদ অর্থে বিদেশ থেকে আমদানি করেছে দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে। আওয়ামী সরকার শুধু দুর্নীতি করে ক্ষান্ত হয়নি। বারবার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর জুলুম করেছে। ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম একবারে ১৭৯ শতাংশ বাড়ানোর রেকর্ড করেছে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার। সেই গণবিরোধী নীতির কারণে জনগণকে আগেও ভুগতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। বর্তমান সরকার বা আগামী দিনে নির্বাচিত কোনো সরকার এলেই যে সমস্যার আশু সমাধান হয়ে যাবে, এমনও নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্যাস খাতে হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া বিপুল বকেয়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে গ্যাস উৎপাদন ও এলএনজি আমদানিতেও গতি আনার চেষ্টা করতে হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু জ্বালানিনীতি অনুসরণ করা হলেও বর্তমান সঙ্কট দূর করতে অন্তত তিন থেকে চার বছর লাগবে।
এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার সঙ্কটকালে সাময়িকভাবে রাজধানীবাসীর জন্য গ্যাস রেশনিংয়ের মতো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কি না ভেবে দেখতে পারে। নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ে পুরোমাত্রায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গৃহিণীরা সেই সময়ে রান্নার কাজ সেরে নিতে পারবেন।
গ্যাস সঙ্কটে ভোগান্তির জন্য নাগরিকরা ক্ষুব্ধ। গৃহিণীরা প্রশ্ন তুলছেন, বাড়তি ব্যয়ে সিলিন্ডার কিনে এবং বিদ্যুতের বাড়তি বিল দিয়ে রান্না করতে হলে সরকারের নিয়মিত গ্যাস বিল আদায় কতটা যৌক্তিক।