ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা, ভোক্তাদের পকেট কাটার ফন্দি

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল করা যায়নি। মানুষের উচ্চ চাহিদাকে পুঁজি করে একটি চক্র তাদের স্বার্থে অপব্যবহার করে। চাল আটা পেঁয়াজ তেল- এ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যকে তারা নিশানা করে। এর মধ্যে ভোজ্যতেলে অশুভ গোষ্ঠীর জন্য একটি লোভনীয় আইটেম হয়ে রয়েছে। বরাবরই দেখা গেছে, দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ে। আমরা বিপুল পরিমাণে ভোজ্যতেল আমদানি করি। দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশীয় বাজারে এর দাম বাড়তে থাকে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কখনো জবাবদিহির আওতায় আনা যায়নি। এবারো আসন্ন রমজান সামনে রেখে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নেয়ার ফন্দি করা হচ্ছে।

নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। এ নিয়ে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এমন সময় দাম বাড়ছে, যখন দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা কমতির দিকে এবং অন্তর্জাতিক বাজারেও দাম কমছে। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার এখন ১৯৮ টাকা। একই সময় পাইকারি বাজারে মণপ্রতি এর দাম ৩০০ টাকা কমেছে।

এ দিকে আমরা যেসব দেশ থেকে এই তেল ক্রয় করি, সেখানে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দাম ৭ থেকে ৮ শতাংশ কমেছে। মালয়েশিয়ায় পামওয়েলের উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি এবং মজুদ বেড়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। এ দিকে তেলের ব্যবহার কমার পরিসংখ্যানও পাওয়া যাচ্ছে। আগাম শীতের কারণে চীনে তেলের ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশের পাইকারি বাজারেও তেলের দাম কমার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তেলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে তেলের দাম সেপ্টেম্বরে মণপ্রতি ছয় হাজার ১০০ থেকে কমে পাঁচ হাজার ৭৭০ টাকা হয়। অথচ দেশের বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি; বরং দফায় দফায় এর দাম বেড়েছে।

দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেট করে প্রায়ই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এবারো রমজানকে নিশানা করে অসাধু চক্র দাম বাড়িয়ে নেয়ার কলাকৌশল করছে। এই ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রাখেন। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকবার কঠোর হওয়ার চেষ্টা করেও এদের পুরোপুরি লাগাম টানতে পারেনি। তবে সাময়িক দাম স্থিতিশীল করতে পেরেছিল সরকার। যখনই সরকার নজর সরিয়ে নিয়েছে, এই অশুভ সিন্ডিকেট বাজার অস্থিতিশীল করে দাম বাড়িয়ে নিয়েছে।

রমজানকে কেন্দ্র করে অশুভ চক্র এর মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠছে। বাজারে ইতোমধ্যে তারা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। রমজান আসার আগেই সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম আরো বাড়িয়ে নিতে পারে তারা। এ অবস্থায় দরকার সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ। যারা ফন্দি আঁটছে, ভোক্তার পকেট কাটবে- তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সময় মতো তেলের পাইকারি বাজার ও গুদামে অভিযান চালাতে হবে। অশুভ চক্রকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে করে তারা বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নিতে না পারে।