আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত প্রবাসী আয়। দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ জীবিকার সন্ধানে বিদেশে থাকেন। তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান। সেই আয় জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পরিবার-পরিজন থেকে হাজার মাইল দূরে থেকে তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও তাদের অবদান মূল্যায়িত হয়নি। শুধু গালভরা কথায় বলা হয়ে থাকে রেমিট্যান্সযোদ্ধা। বাস্তবে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে বিগত সরকারগুলোর কার্পণ্য ছিল। একই সাথে বিদেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসগুলো থেকেও তারা প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। অন্য দিকে ভিনদেশের কর্মক্ষেত্র থেকে দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরেও অনেক প্রবাসী হেনস্তার শিকার হন।
যেহেতু প্রবাসীরা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, তাই তারা দীর্ঘ দিন ধরে রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক অধিকার, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার চেয়ে আসছিলেন; কিন্তু বিগত সময়ে ওই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবি পূরণের ঘোষণা দেন। এরপর নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন বলছে, আগামী ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত অর্ধকোটি প্রবাসী ভোটারকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। বর্তমানে ১০ দেশের ১৭টি দূতাবাসে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সরবরাহের কাজ চলছে। দেশগুলো হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান। শিগগির যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
গণমাধ্যমকে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বিভিন্ন দেশে এক কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের এনআইডি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখান থেকে অর্ধেক ভোটারের সাড়া পাওয়া যাবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বিশ্বে প্রবাসী ভোটের হার সাধারণত ২০-২২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণে ইসি দেখেছে, ৪০টি দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আছেন সৌদি আরবে, ৪০ লাখের বেশি। সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডে, আড়াই হাজার। প্রবাসীদের ভোটে আনতে তৈরি হচ্ছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ। এ জন্য নেয়া হয়েছে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প। ইসি কর্মকর্তাদের মতে, প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য ব্যয় হবে প্রায় সাত কোটি টাকা।
প্রবাসীরা অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে এনআইডি নাম্বার ও বর্তমান ঠিকানা জমা দেবেন। তফসিল ঘোষণার পর তাদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা প্রস্তুত হবে। ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায়। ব্যালটে শুধু রাজনৈতিক দলের প্রতীক থাকবে, প্রার্থীর নাম নয়। ভোটার ব্যালটে নির্দিষ্ট প্রতীকে চিহ্ন দিয়ে খামে ভরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ডাকযোগে পাঠাবেন। এসব ব্যালট জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষিত থাকবে এবং নির্বাচনের দিন সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটের সাথে একযোগে গণনা করা হবে।
জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা প্রবাসীদের ভোটাধিকার না দেয়া ছিল অমার্জনীয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সুযোগ দিয়ে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।