শ্রীপুরে ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট, চাষিদের দুশ্চিন্তা দূর করুন

ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। সাধারণত রোপা আমন ধানই বেশি চাষ করা হয়। কিন্তু এর শ্রমিক সঙ্কট তীব্র। ফলে ধান পাকলেও কাটা যাচ্ছে না। জোঁকের উপদ্রব থেকে বাঁচতে উপায় খুঁজে বের করা জরুরি।

আমাদের দেশে কৃষি শ্রমিকের যথেষ্ট সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমনকি প্রধান খাদ্যশস্য ধান কাটার শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে। যেমন- রাজধানীর উপকণ্ঠে গাজীপুর জেলায়। বৃহত্তর সিলেটের কথা আমরা শুনেছি, সেখানে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরবঙ্গের লোকজন যায় ধান কাটার জন্য।

গাজীপুরেও একই অবস্থা। সেখানকার একটি সহযোগী দৈনিকের শ্রীপুরের সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটার জন্য রয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আবাদি জমিতে রয়েছে জোঁকের প্রকোপ। ধান কাটার শ্রমিকরা জোঁকের ভয়ে কাজ করতে চান না। শরীরে কেরোসিন মেখে আর লবণ ছিটিয়ে জমিতে নামতে হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটার চিত্র চোখে পড়ছে। এখনো পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। কিছু জমিতে পানি রয়েছে। ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে। তবে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সবাই খুব খুশি। জমিতে পানি থাকায় ধান কাটার মেশিন কাজ করছে না। হাতেই ধান কাটতে হচ্ছে। শ্রমিক সঙ্কটে কৃষক দুশ্চিন্তায়।

বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক ও শ্রমিকরা আলাদা প্রোটেকশন নিয়ে জমিতে নামছেন। গামবুট পরে; কেউ গায়ে কেরোসিন মাখিয়ে ধান কাটতে নামেন জমিতে। জোঁক শরীরের রক্ত শুষে নেয়। শরীর থেকে সামান্য রক্ত ঝরে।

কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে জোঁকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কৃষক জোঁক থেকে সহজে পরিত্রাণ পেতে পরামর্শও চাইছেন। সামান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলে জোঁকের ভয় কাটবে।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, শ্রীপুরের একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৩০ হেক্টর ভূমিতে রোপা আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। উফশী জাত ১২ হাজার ৪০ হেক্টর, হাইব্রিড ৫২০ হেক্টর আর স্থানীয় জাতের ধান ৪৭০ হেক্টর জমিতে করা হচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে পুরোদেশে ধান কাটা শুরু হবে।

তবে এসব গ্রামে সবার মধ্যেই জোঁক আতঙ্ক।

অনেকে কাজের লোক সংগ্রহ করে ধান কাটার কাজে লাগিয়েছেন। তাদের মধ্যে জোঁক আতঙ্ক রয়েছে। জোঁকের কারণে শ্রমিকরা টাকাও নিচ্ছেন বেশি।

পেলাইদ গ্রামের ধানচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, চার বিঘার ধান কাটতে শ্রমিক এনেছিলাম। জোঁক আছে শুনে ভয়ে ধান না কেটেই তারা চলে যেতে চায়। পরে তাদের গামবুট কিনে দেয়া হয়। ধান কাটা শ্রমিক আইনাল বলেন, এ অঞ্চলে একযুগের বেশি সময় ধরে ধান কাটতে আসি। গত দুই বছর ধরে জোঁকের ভয় বাড়ছে। শ্রমিকরা ধান কাটতে ভয় পায়। আমরাও নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমিতে নামি।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ আফরোজা বলেন, এ বছর আমরা মাঠ ভিজিটে গিয়ে এ সমস্যা বেশ বুঝতে পেরেছি। কৃষকদের বলছি যেন তারা প্রোটেকশন নিয়ে মাঠে কাজ করেন। জোঁক নিয়ন্ত্রণে কোনো ওষুধ আছে কি না, তারও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। সাধারণত রোপা আমন ধানই বেশি চাষ করা হয়। কিন্তু এর শ্রমিক সঙ্কট তীব্র। ফলে ধান পাকলেও কাটা যাচ্ছে না। জোঁকের উপদ্রব থেকে বাঁচতে উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।