বাংলাদেশের অর্থনীতি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি-রফতানির বেশির ভাগ এ বন্দর দিয়ে হয়। কেনোভাবে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হলে সরাসরি দেশের ব্যবসাবাণিজ্য থমকে দাঁড়ায়। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী হয়ে গেলেও এর বিকল্প তৈরি করা হয়নি। সুযোগ ছিল দেশে আরো সমুদ্রবন্দর নির্মাণের। এর সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ-সুবিধাও সেভাবে আধুনিকায়ন হয়নি। বরং এই বন্দরকে নানাভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা হয়েছে বরাবর। অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। তারা জোর দিচ্ছে একে গতিশীল করে কার্যকারিতা বাড়ানোর ওপর। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।
বন্দর পরিচালনায় বিদেশী অপারেটর নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লালদিয়া টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল ২৫ বছরের জন্য পরিচালনায় বিদেশীদের সাথে ডিসেম্বরে চুক্তি হতে যাচ্ছে। বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনার জন্যই এ সিদ্ধান্ত। দেশের ব্যবসাবাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য এটি জরুরি। এ বন্দর দিয়ে মাল পরিবহন অত্যন্ত ধীর। মাল খালাসের জন্য জাহাজগুলোকে মাসাধিককাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যায়।
ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পাশাপাশি এই বন্দর নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রভাবেরও শিকার। সরকার চাইছে এই বৃহৎ বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ ও যোগ্য অপারেটরদের দায়িত্ব দিতে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। বন্দর ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত দেশীয়রা উন্নত বন্দর ব্যবস্থাপনার কৌশল তাদের থেকে সঞ্চয় করবে। সরকারের প্রচেষ্টার কিছু ফল ইতোমধ্যে মিলছে। কনটেইনার সংরক্ষণ, জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং সামগ্রিক কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। পণ্য খালাসের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখন বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল দু’দিনে নেমে এসেছে।
১৪ সেপ্টেম্বরে নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে ৪১ শতাংশ। একটি পারমর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয় ২০২০ সালে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে মাশুল বাড়ানো হয়। মাশুল ১৯৮৬ সালের পরে নবায়ন করা হয়নি। এতে দেখা যাচ্ছে, এ অঞ্চলের অন্য বন্দরগুলোর চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যয়বহুল হয়েছে। এতে করে আমদানি-রফতানি পণ্যের পরিবহন খরচ বাড়বে। শিল্পের কাঁচামালের ওপরও কিছুটা প্রভাব পড়বে। এ দিকে এর সুবিধাভোগী হবে বিদেশী অপারটেররা। এমন অভিযোগের বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে দেখতে হবে। বন্দরের মাশুল বৃদ্ধির কারণে যদি এর ব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ের দক্ষ হয়, যা আসলে বন্দর ব্যবহারকারীদের অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে দেয় তাহলে এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য সংস্কারের মধ্যে বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়নও অগ্রাধিকার পায়। দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বন্দরের কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বন্দর নির্মাণের আগে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিদেশীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার প্রভাবও আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশকে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আরো বিকল্প ভাবতে হবে। বঙ্গোপসাগরে আমাদের আরো বন্দর নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি আকাশপথে দ্রুত পণ্য পরিবহনের সুযোগ বড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে।