দেশে স্নাতক উত্তীর্ণদের মধ্যে বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি, প্রায় ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৯ লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মহীন, যা আট বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি হওয়ার মূল কারণ ভুল শিক্ষাব্যবস্থা, বাজারের চাহিদার সাথে সমন্বয়হীনতা, অর্থনীতির নাজুক অবস্থা।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা প্রায় ৬৬ শতাংশ তরুণ আংশিক বেকারত্বের (আন্ডার এমপ্লয়েড) মধ্যে রয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে বলা হয়েছিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৬ শতাংশ স্নাতক ৩-৪ বছর পর্যন্ত বেকার থাকছেন।
জাতীয় বিদ্যালয়ের অধীন ৫১৫টি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা এক হাজার ৬৩৯ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে উল্লিখিত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের জরিপের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
আংশিক বেকারত্ব বা আন্ডার এমপ্লয়েড বলতে শ্রমশক্তিতে যুক্ত এমন ব্যক্তিদের বোঝায়, যারা যোগ্যতা অনুযায়ী কাক্সিক্ষত চাকরি খুঁজে পাননি এবং পূর্ণকালীন কাজের সাথে যুক্ত নন। ফল ভালো থাকলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রধান প্রতিবন্ধক।
এসব শিক্ষিত তরুণ নিজেদের বেকার মনে করলেও বিশ্ব শ্রম সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেও তাকে আর বেকার বলা হয় না।
বিআইডিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ছয়টি ভাগে বিভক্ত করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ চাকরি করছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১ দশমিক ৬ শতাংশ। টিউশনি করছেন প্রায় ৭ শতাংশ। খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত সাড়ে ৫ শতাংশ। কাজ খুঁজছেন ৩৩ শতাংশ। দৈনিক মজুরিতে কাজে যুক্ত ২৯ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী। আর এসব স্নাতক ডিগ্রিধারীর ৬১ শতাংশের অনার্স বা মাস্টার্স পর্যায়ে কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। অভিজ্ঞতা ছিল ৩৭ শতাংশের। এমনকি তাদের ৫৫ শতাংশের আইসিটি (তথ্যপ্রযুক্তি) নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না।
গবেষণা প্রতিবেদনের নীতি সুপারিশে বলা হয়, স্নাতক ডিগ্রিধারীরা চাকরির পরীক্ষায় ডাক পেলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় চাকরি পান না। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুই হাজারের বেশি কলেজের সাথে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়া হয়। আসলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া স্নাতকধারীদের দক্ষতা এবং বাজারে চাকরির চাহিদার মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে বলে তাদের বেকার থাকতে হচ্ছে। সেই সাথে দেশের অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিও উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্ব বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দেয়া এবং চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে শিল্পখাতের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি ও ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা বাড়াতে সফট স্কিল এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একই সাথে স্বউদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। তা হলে দেশে বেকার সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।



