চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা পুলিশের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করছে না। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চাঁদাবাজদের হামলায় পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে বলা হয়, গত ৭ অক্টোবর সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজদের হামলায় তিন পুলিশ সদস্য ও বাল্কহেডের দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র মেঘনা নদীতে বালু ও পণ্যবাহী নৌযানে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে। চক্রের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা। সোনারগাঁওয়ের একটি চক্রও সেখানে একই কাজে জড়িত।
বিভিন্ন নৌযান মেঘনা নদীর নুনেরটেক এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদাবাজরা টেঁটা, বল্লম ও রামদা নিয়ে সদলবলে নৌযানে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে বা অস্বীকার করলে হামলা করে। এমনই এক ঘটনায় বৈদ্যেরবাজার ও চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা অভিযান চালান। এ সময় চাঁদাবাজরা পুলিশের ওপর টেঁটা, বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তিন পুলিশ সদস্যকে আহত করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে রানা ও সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে।
গত দেড় যুগ ধরে দেশে এক ধরনের স্বৈরাচারী নৈরাজ্য চলেছে। আইনশৃঙ্খলার কোনো বালাই ছিল না। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, গুম-খুনে এমন অবস্থা ছিল যে, কেউ টুঁ শব্দটিও করতে পারত না।
এসব ঘটনাকে চাঁদাবাজি বলা হলেও আসলে তা ডাকাতি-রাহাজানির পর্যায়ে পড়ে। দেশের নৌপথের নিরাপত্তা রক্ষা করা জনজীবন ও ব্যবসায়-বাণিজ্য- উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটি করতে না পারলে ব্যবসায়-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
দেশে এই মুহূর্তে পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর নয়। নানা কারণে গত এক বছরে এই বাহিনীকে সার্বিকভাবে সুসংহত করা যায়নি। মেজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী। তারপরও আইনশৃঙ্খলার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়া হতাশাজনক। কারণ এর আগে বিশেষ পরিস্থিতিতে যখনই সেনাবাহিনীকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তখন তারা সাফল্যের সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এবার তার ব্যত্যয় ঘটা অনভিপ্রেত।
আমরা আশা করব, সেনাবাহিনী আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এবং বাহিনীর ভাবমর্যাদা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে। সেই সাথে প্রয়োজনে মেঘনা নদী এলাকায় নৌপুলিশের থানা স্থাপন ও টহলদারির ব্যবস্থা করা যায় কি না ভেবে দেখতে হবে।