আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং সমমান পরীক্ষা নিয়ে যুক্তি সঙ্গতকারণেই জনপরিসরে তুমুল আগ্রহ-উদ্দীপনা রয়েছে। দু’টি পরীক্ষার ফল শিক্ষার্থীদের জীবনের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। একই সাথে জীবনের সাফল্যের অনেকটা এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এ দুই স্তরের শিক্ষার ফলের ব্যাপারে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে গভীরভাবে ভাবিত থাকেন। তাই দেখা যায়, প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসিসহ সমমান পরীক্ষার ফল নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন লাখো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।
সেই ধারাবাহিকতায় এবারের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে কাক্সিক্ষত ফলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সাথে সাথে এবারো বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এটি সহজেই বোধগম্য।
পরিসংখ্যান বলছে, ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে যে ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এবার গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। ওই হিসাবে, এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। এবার দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। গত বছর শূন্য পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৫। অর্থাৎ, পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির বিবেচনায় গতবারের তুলনায় এবারের ফল নিশ্চিতভাবে ভালো নয়। ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ ৫ পাওয়ার হার গতবারের চেয়ে অনেক কমেছে।
আমরা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই। যারা পরীক্ষায় কোনো কারণে কৃতকার্য হতে পারেননি তাদের প্রতি চাওয়া- তারা যেন হাল না ছাড়েন। লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। অন্য দিকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল অর্জন করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হতাশা থেকে অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নেন। কেউবা বেছে নেন আত্মহননের পথ। সঙ্গতকারণে কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে না পারা শিক্ষার্থীদের এখন পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন প্রয়োজন। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে আরো ভালো করার প্রেরণা জোগাতে হবে তাদের। তবে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন- দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে, বিশেষ করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সুযোগের জন্য প্রস্তুতি, যেমন- পুনঃপরীক্ষা বা বিকল্প পথে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করা এবং তাদের মানসিক শক্তি জোগানো অত্যন্ত জরুরি।
পরিশেষে আমরা এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানাই। আর অকৃতকার্যদের প্রতি রইল শুভ কামনা।