এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে চার দিকে। এ বছর শুধু রাজধানী শহর নয়- চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, কক্সবাজারসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের শরীরে তীব্র ব্যথা ছাড়াও অনেক রোগী ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। চিকিৎসাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় এ রোগ সহসা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারায় অনেকের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। ফলে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি জিকা ভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। চট্টগ্রামে চারজন জিকা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। উল্লিখিত রোগ দু’টি মশাবাহিত হলেও মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনগুলোর দায়িত্বশীলতা দৃশ্যমান নয়। বাস্তবতা হলো, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এডিস মশা ও লার্ভা নিধন কার্যক্রম জোরদার না করায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা দৃষ্টিকটুভাবে ধরা পড়ছে।
কীটতত্ত¡বিদদের মতে, এডিস অ্যালবোপিক্টাস নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয়। সাধারণত এ মশার প্রজননস্থল ঝোপঝাড়। ঢাকা শহরে এর প্রজনন খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এবার রাজধানীতে জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে। অন্য দিকে এডিস এজিপিটাইর কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় মানুষ। এ ছাড়া এডিস মশা জিকা ভাইরাসও ছড়ায়। এ ভাইরাস স্নায়বিক সমস্যা তৈরি করে।
ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়া দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষার ফল পেতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগে। ততদিনে রোগীর জ্বর থাকে না। তবে ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী নয়। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অক্ষমতা বেশি দেখা যায়। অনেকে এক থেকে দুই বছরের মতো বাতজনিত ব্যথায় ভুগতে পারেন।
রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বড়ে যাওয়ার কারণ, এক দিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মশক নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা, অন্য দিকে চিকিৎসায় বড় দুর্বলতা। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি ডেঙ্গু না চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত তা যথাসময়ে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। শুধু উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অথচ চিকিৎসকদের দায়িত্ব যেখানে পাঠালে রোগ সহজে চিহ্নিত করা যাবে, সেখানে স্যাম্পল পাঠিয়ে তা চিহ্নিত করা।
মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে মশক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় উপসর্গ চিহ্নিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর এসব বিষয়ে ভাবতে হবে। তা না হলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
সরকারের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এতে প্রতি বছর আক্রান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। শত শত রোগী মারা যাচ্ছেন ডেঙ্গুতে। তবু এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের মাথাব্যথা নেই। সবচেয়ে যা হতাশার তা হলো, সারা দেশে প্রতিদিন কত রোগী ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সে তথ্য নেই খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় (সিডিসি)। অথচ কোন ভাইরাসে কত রোগী আক্রান্ত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব না থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়, রোগ নিয়ন্ত্রণও অসম্ভব।