ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। জনগণ এই দিনের অপেক্ষায় ছিল অধীর আগ্রহে। রাষ্ট্রযন্ত্র কব্জা করে দীর্ঘ পীড়নের শিকার মানুষ একসময় আশা হারিয়ে ফেলেছিল। শেখ হাসিনা ও মাফিয়াচক্র এমনভবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, যেন তাদের পতন নেই। সেই হতাশা দেশবাসী গত বছরের জুলাইতে কাটিয়ে ওঠেন। বিপুল রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা মাফিয়া শাসনকে পরাস্ত করেছে। দেশী-বিদেশী চক্রান্তে শেখ হাসিনার বিচার আদৌ করা সম্ভব কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল। বাস্তবে প্রমাণ হলো ক্ষমতার দম্ভ কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৃশংসতার শিকার প্রতিটি পরিবারে আজ স্বস্তি নেমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ শেখ হাসিনা ও তার দুষ্কর্মে সহযোগী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। অপরাধের স্বীকৃতি দিয়ে অনুতপ্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। হাসিনাকে দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং একটি অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিচারের মানদণ্ড পূরণে যত্নবান ছিলেন। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ে এ বিচারের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে হাসিনা ও তার দোসরদের অপরাধের আলামত ছিল দিনের আলোর মতো স্পষ্ট আর দৃশ্যমান। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রসিকিউশন টিম শতভাগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। রায়ে তা অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে উঠে এসেছে।
গত বছরের ১৪ আগস্ট মামলাটি দায়েরের পর পরোয়ানা জারি, তদন্ত প্রতিবেদন পেশ, অভিযোগ দাখিল, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপন প্রতিটি ধাপ আইন অনুযায়ী হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের একটি স্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একে নিষ্পন্ন করা হয়েছে। অথচ এই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে প্রতিপক্ষ হত্যায় শেখ হাসিনা যথেচ্ছ অপব্যবহার করেন। কিন্তু তার বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এ মামলায় পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। তার একটি ছিল পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা। সবচেয়ে জঘন্য ছিল আশুলিয়ার ছাত্র-জনতা হত্যা। হত্যার পর লাশের সাথে আহতদের জীবিত পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দান এবং তার আগে গণভবনে থেকে ছাত্র-জনতাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে রংপুরের আবু সাঈদকে হত্যার পর। সেই আবু সাঈদ হত্যারও অভিযোগ আনা হয়। প্রতিটি অভিযোগের বিরুদ্ধে অডিও-ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীর চাক্ষুষ সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল। পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে ৫৪ জন আদালতে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। বিচারের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া প্রকাশ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো কিছু ধামাচাপা কিংবা পেছনের দরজা দিয়ে করার সুযোগ ছিল না। সর্বশেষ গণমাধ্যমে এ রায় সম্প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববাসী একজন ফ্যাসিস্টের বিচার স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করল।
আজ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের বিজয়ের দিন। এ বিজয়ের পূর্ণতা দিতে হলে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী চক্রের বাকি বিচার সম্পন্ন করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে দেশের ভেতরে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে এবং তাদের দেশী-বিদেশী সহচরদের দিয়ে তা বানচালের অপচেষ্টা চালাবে তারা। দেশবাসী এর মধ্যে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস রুখে দিয়েছে। তাদের অবৈধ কর্মসূচি জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আশা করা যায়, ফ্যাসিবাদীদের বিচার সম্পন্ন করে বাংলাদেশের নতুন এক যাত্রার সূচনা হবে। সেই বাংলাদেশে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।



