ঘর বিক্রি করে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা, নাগরিকদের অধিকার সমান

প্রাচীন গ্রিসে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্র ছিল। এ নগর রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের নাগরিক বলা হতো। এখন রাষ্ট্রের সব বাসিন্দাদের নাগরিক বলা হয়। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। ধনী কী নির্ধন, উচ্চ শিক্ষিত কী অর্ধশিক্ষিত, সচ্ছল বা অসচ্ছল কোনো পার্থক্য নেই; রাষ্ট্র থেকে বৈষম্যহীন ব্যবহার সবার প্রাপ্য।

আমাদের দেশের স্বেচ্ছাচারমূলক শাসনব্যবস্থায় (২০০৯-২০২৪) দুর্নীতি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত ছিল। বিগত সময়ে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। তখন দুর্নীতি উৎসাহিত করা হতো। দুর্নীতি মুজিববর্ষকেও ছাড়ে নাই। একটি সহযোগী দৈনিকের টেকনাফ (কক্সবাজার) সংবাদদাতার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একটি স্বপ্ন আর একটি আশ্বাস ছিল ঘর পাবেন গৃহহীনরা। বদলে যাবে জীবনের স্বপ্ন।

গণ-অভ্যুত্থানে পালিয়া যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার থেকে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাস্তবায়িত হয়েছিল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমিহীনদের দেয়া হয় সাড়ে ৫০০ ঘর।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালীতে নির্মিত হয় ৬০টি ও মিনাবাজারে দেয়া হয় ৭২টি সেমিপাকা ঘর। উদ্দেশ্য ছিল গৃহহীনদের পুনর্বাসন। সেই স্বপ্ন এখন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বসবাস করার কথা ছিল নিরাপদে, সেখানে রাজত্ব চলছে মাদকসেবী ও স্থানীয় অপরাধীদের। তাদের ভয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের কেউ ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন পানির দামে। ইতোমধ্যে শতাধিক ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। নিয়ম না থাকলেও অল্প দামে মৌখিক বা স্ট্যাম্পভিত্তিক চুক্তিতে বিক্রি হচ্ছে ঘর। কিনে নিচ্ছেন মাদক কারবারি ও বিভিন্ন অপরাধীরা। যেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখন মাদক কারবারি ও বিভিন্ন অপরাধীর আস্তানায় পরিণত হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, খারাংখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে সন্ধ্যা নামলে বদলে যায় দৃশ্যপট। উপকারভোগী অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন নিরাপত্তার অভাবে। যে ঘরগুলোতে এখনো মানুষ থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা রাত হলে থাকেন আতঙ্কে। এলাকায় সন্ধ্যার পরপর মাদকসেবীদের জমায়েত শুরু হয়। প্রশাসনিক নজরদারি না থাকায় এলাকাটি মাদক কারবারি ও অপহরণকারীদের নিরাপদ আশ্রয়। আশপাশে গভীর পাহাড়, নির্জন এলাকা-সব মিলিয়ে জায়গাটি অপরাধীদের জন্য বেইজ ক্যাম্প হয়ে উঠেছে। রাত হলে আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের ভয় দেখানোর জন্য ডাকাতির নাটক সাজিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। ফলে সারা রাত ভয়ে মানুষ ঘুমাতে পারেন না।

প্রাচীন গ্রিসে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্র ছিল। এ নগর রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের নাগরিক বলা হতো। এখন রাষ্ট্রের সব বাসিন্দাদের নাগরিক বলা হয়। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। ধনী কী নির্ধন, উচ্চ শিক্ষিত কী অর্ধশিক্ষিত, সচ্ছল বা অসচ্ছল কোনো পার্থক্য নেই; রাষ্ট্র থেকে বৈষম্যহীন ব্যবহার সবার প্রাপ্য। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তারা মুজিবের নামও ভাঙিয়েছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ত্রুটিযুক্ত ছিল। প্রশাসনের উচিত উল্লিখিত এলাকা থেকে অবৈধ বাসিন্দাদের দ্রুত বের করে দেয়া। পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা। দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। তবেই আশা করা যায়, আশ্রয়কেন্দ্রের অসহায় বাসিন্দারা শান্তিতে বাস করতে পারবেন।