পারিবারিক কলহে বাড়ছে নৃশংসতা, দুর্বল ধর্মীয় অনুশাসনের বিষফল

ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন চর্চা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার মতো আর্থিক নিশ্চয়তা এবং ভুক্তভোগীর দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারলে পারিবারিক কলহ ও নৃশংসতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।

বাংলাদেশে এক সময় পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় থাকলেও সময়ের সাথে তা ক্রমশ আলগা হয়েছে। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে একক পরিবারে রূপ নিয়েছে। সেই সাথে পারিবারিক মূল্যবোধ দুর্বল হয়েছে। পরিণতিতে বেড়েছে পারিবারিক কলহ ও নৃশংসতা। নৃশংসতার মাত্রা এতটা বেড়েছে যে, পিতা সন্তানকে হত্যা করছেন, আবার সন্তান জন্মদাতা পিতাকে হত্যা করছে। স্ত্রীকে হত্যা করছেন স্বামী আবার স্ত্রী খুন করছেন স্বামীকে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ঘরে úাওয়া গেল একই পরিবারের তিনজনের লাশ। এর এক দিন পর নারায়ণগঞ্জে ভাড়া বাসার দরজা ভেঙে চার বছরের শিশুসহ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিছু দিন আগে রাজশাহীতে ঘর থেকে দুই সন্তান ও বাবা-মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। কয়েক দিনের ব্যবধানে এসব হত্যার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে।

কী কারণে এসব নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, সে রহস্য উদঘাটন হওয়া উচিত। পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন- পারিবারিক কলহে এসব হত্যার ঘটনা ঘটে।

পুলিশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে মোট হত্যাকাণ্ডের ৪০ শতাংশ হয় পারিবারিক কলহে। স্বামী-স্ত্রীর বিরোধে নিরপরাধ শিশুরাও হত্যার শিকার হয়। ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সারা দেশে এক হাজার ৫৮৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। এ সময়ে রাজধানীতে ১৬৮ জন খুন হন। বেশির ভাগ খুনের কারণ পারিবারিক।

এসব পারিবারিক কলহ আর নৃশংস হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা ধর্র্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার অভাব, সামাজিক বঞ্চনা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও ইন্টারনেটের অযাচিত ব্যবহারের কথা বলেন। একই সাথে এসব ঘটনায় বিচারহীনতার সংস্কৃতিও দায়ী।

বাংলাদেশের সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা একসময় শিক্ষার ভিত্তি ছিল। এখানে শৈশব থেকে একটি শিশু মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষালাভের পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধেরও শিক্ষা পেত। সেই শিক্ষা আজ অনেকটাই বিলীন। আর প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মশিক্ষা প্রায় বর্জন করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিজের ধর্ম সম্পর্কেও জানতে পারে না। অথচ ধর্মীয় জ্ঞান ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। মানুষকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। তাকে বিবেক দিয়ে চালিত করে। সমাজে কলহ বিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে ধর্মীয় শিক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও জীবনে হতাশা ডেকে আনে, যা পারিবারিক কলহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের দিকে জোর দিতে হবে।

সন্দেহ নেই দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি চালু ছিল। মানুষ ধরেই নিয়েছিল অপরাধ করলে পার পাওয়া যায়। এর ফলে কিছু মানুষের অপরাধ করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এসব অপরাধের মধ্যে পারিবারিক অপরাধও বিদ্যমান। বিচারহীনতার অবসান ঘটাতে হবে। ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতে রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।

ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন চর্চা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার মতো আর্থিক নিশ্চয়তা এবং ভুক্তভোগীর দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারলে পারিবারিক কলহ ও নৃশংসতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।

আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে মনোযোগী হবে।