সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন চলছেই, লাগাম টানা দরকার

গণতান্ত্রিক সমাজে দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন স্বাভাবিক বিষয়। এই সুযোগ বন্ধ করা যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সবাই একযোগে তাদের দাবিদাওয়া জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছে। দীর্ঘ সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকায় এখন সুযোগ পেয়ে দাবি আদায়ে এর বেপরোয়া প্রকাশ ঘটাচ্ছেন নাগরিকরা। সরকারের নমনীয় মনোভাবের সুযোগ নিয়ে দাবিদাওয়া প্রকাশকারীরা এমনভাবে চড়াও হচ্ছেন, যাতে অন্যদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এমনকি সেটি ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের জীবন-মরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্দোলনের নামে রাজধানীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রতিনিয়ত অবরোধ করে ফেলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দিকে এই উৎপাত সহ্য করা হলেও এখন আর এ ধরনের কর্মসূচির ঢালাও অনুমতি দেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। দাবিদাওয়া প্রকাশের মাত্রাহীন প্রকাশে অন্যের অধিকার যেন খর্ব না হয়, সেটি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

গত রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বেশ কয়েকটি গ্রুপ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরোধ করে। আগারগাঁও মোড়, শাহবাগ মোড় ও শিক্ষাভবনের সামনে তাদের আন্দোলনের কারণে ঢাকা অচল হয়ে পড়ে। এসব এলাকা সরকারের প্রশাসন পরিচালনা এবং বড় বড় হাসাপাতাল থাকায় যান চলাচল সবসময় সচল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূণ। দেখা গেছে, ১৬ মাসের এই সরকারের সময় এমন কোনো দিন নেই, এই এলাকা অচল করা হয়নি। সরকারের কাজ ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অনেক বেশি অসুবিধা তৈরি হয় রোগীদের জন্য। জরুরি চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের মধ্যে আটকে থাকেন।

গত রোববার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা আগারগাঁও বিটিআরসি কার্যালয় ঘেরাও করে। তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে রাখে। সড়কের চার জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এখানে শিশু, পঙ্গু ও নিউরোসায়েন্স, তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এই সময় রোগীদের চলাচলে বেগ পেতে হয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় দখল করে নেয়। ৫ আগস্টের পর এই মোড় আন্দোলনকারীদের স্বর্গ হয়ে যায়। যে যখন ইচ্ছা, এসেই শাহবাগে বসে পড়ছে। অথচ এখানে দেশের দু’টি বড় হাসপাতাল রয়েছে। নিয়মিত রোগীরা আসা-যাওয়া করেন। অনেকসময় একেবারে মুমূর্ষু রোগীরা রাস্তা অবরোধের কারণে আটকা পড়েন। সাত কলেজের আন্দোলনকারীরা শাহবাগে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর শিক্ষাভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেন। সাত কলেজের একটি অংশকে রাজাধানীর আরো কয়েকটি জায়গায় এ দিন রাস্তায় আন্দোলন করতে দেখা গেছে। এতে শহরের হাজার হাজার মানুষ যানজটের পড়ে ভুগেছেন।

গণতান্ত্রিক সমাজে দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন স্বাভাবিক বিষয়। এই সুযোগ বন্ধ করা যাবে না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এর ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। বহু আন্দোলন এমন হয়েছে, যার দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতার চেয়ে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে তীব্র। সরকারের নমনীয় নীতি গ্রহণকে অনেকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। অনেকে এই সুযোগে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। এভাবে ফ্রি স্টাইলে অন্যের অসুবিধা সৃষ্টি করে বেপরোয়া আন্দোলন করতে দেয়া যায় না। যে কেউ চাইলেই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের সতর্ক পদক্ষেপ প্রয়োজন।