জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যর্থতা, এখনই ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের (বিসিসিটি) কাজ হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের (বিসিসিটি) কাজ হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। যেমন- ঝুঁকি মোকাবেলায় অভিযোজন, প্রশমন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক গবেষণার ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে সফল বলার উপায় নেই। কারণ দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে এর কর্মকাণ্ডে ব্যর্থতার নমুনা স্পষ্ট। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মঙ্গলবার। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটির অধীনে অনুমোদিত ৮৯১টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দের ৫৪ শতাংশের বেশি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অপচয় বা আত্মসাৎ হয়েছে।

‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’-শীর্ষক টিআইবির গবেষণায় জানা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই তার মূল কাজের সাথে সম্পর্কহীন। প্রকল্পের অর্থে সাফারি পার্ক, ইকো-পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে, শহর ও পৌরসভায় সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এসব প্রকল্পের সাথে জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসের সম্পর্ক দুরবিন দিয়ে খুঁজে বের করতে হবে। বাস্তবায়িত প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ সম্পাদন করা হয়েছে এবং অর্থ জালিয়াতি করা হয়েছে। এমনকি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রকল্প অনুমোদনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনে ১৭৫ কোটি টাকা, ঠিকাদার নিয়োগের অনিয়মে ৬০০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে এক হাজার ২৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তদারকি পর্যায়েও ৫৪ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু অর্থায়ন এবং এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সামান্যই।

সত্য বটে, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে পরের ১৭ বছরে দেশে এমন শাসন কায়েম ছিল- যা দেশ ও জনগণের উন্নয়ন নয়; বরং ব্যক্তি ও দলের স্বার্থরক্ষায় দেশে অবাধ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও এর বাইরে ছিল না। তাদের নৈরাজ্যকর শাসনে গোটা ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে, যা এখনো ধুঁকছে। জলবায়ু তহবিলেও একই কাজ হবে- এটিই স্বাভাবিক। এটিও হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক যোগসাজশে দুর্নীতির ক্ষেত্র। দুর্নীতিতে জড়িত বোর্ডের সদস্য, প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল ও বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের একাংশ।

প্রতিষ্ঠানটির অর্থ বরাদ্দ এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। অথচ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এখানে যে সামান্য বরাদ্দ পাওয়া যায় তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা ছিল ফরজে আইন; কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার বিপরীত।

২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন খ্যাতিমান পরিবেশবিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট। জনগণ আশান্বিত ছিল, পরিবেশ-সংক্রান্ত ইস্যুগুলো যথাযোগ্য অগ্রাধিকার পাবে; কিন্তু গত প্রায় দেড় বছরে পরিবেশের খুব একটা উন্নতি হয়েছে, বলা যাচ্ছে না।

আমরা বলতে চাই, অন্তত জলবায়ুঝুঁকি মোকাবেলায় কোনোরকম গাফিলতি না হোক। প্রয়োজনে বিসিসিটি পুনর্গঠন করে এটিকে প্রকৃত ঝুঁকিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিয়োজিত করা হোক। যেখানে দেশ ও জনগণের বিরাট অংশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্তিত্বহীনতার ঝুঁকির মুখে, সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামান্য ব্যর্থতাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।