ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জনবল সঙ্কট দূর করুন

সরকারি চিকিৎসাসেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানাবিধ সমস্যা।

সরকারি চিকিৎসাসেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানাবিধ সমস্যা। জনবল সঙ্কট, আবাসন সঙ্কট, কোথাও পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সরঞ্জাম নেই, আবার কোথাও চলছে অনিয়ম-দুর্নীতি। সরকারি হাসপাতালের হতশ্রী অবস্থার কারণে দেশের বিপুল মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন।

পাবনা জেলার ইশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুরবস্থা নিয়ে একটি সহযোগী দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, হাসপাতালটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি হন ৬০ থেকে ৭০ জন। তাই বারান্দা ও মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের একটি অংশকে। হাসপাতালটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন্যান্য লোকবল সঙ্কটের কারণে বাড়তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদের ১১টির মধ্যে ১০টিই শূন্য। কাগজে-কলমে তিনজন দেখানো হলেও একজন অর্থোপেডিকস সার্জনকে পাবনা সদরে ও গাইনি কনসালট্যান্টকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। মেডিক্যাল অফিসারের ১৪টি পদের মধ্যে ছয়টিই শূন্য। দেড় বছর ধরে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার পদ শূন্য। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ১৯ পদের আটটি শূন্য। পাঁচ বছর ধরে বাবুর্চি পদ শূন্য। সহকারী বাবুর্চি প্রতিদিন ৫০ জন রোগীর তিনবেলা খাবার রান্না করেন। ধাত্রী বা মিডওয়াইফার পদের চারজনের স্থলে দু’জন থাকলেও তারা নিয়মিত আসেন না। পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। পৌরসভা থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ভাড়ায় এনে কোনো রকমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। দু’জন আয়ার মধ্যে একজন, তিনজন ওয়ার্ডবয়ের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন একজন।

হাসপাতালের এই চিত্র বড়ই করুণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এসব যেন দেখার কেউ নেই। বাস্তবে তদারকি করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রয়েছে। এই সমস্যাগুলো দেখে সময়মতো তাদের সমাধান দেয়ার কথা। সবকিছু কোথায় যেন আটকে গিয়ে বন্ধ হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ হেলথ ওয়ার্কফোর্স স্ট্র্যাটেজি-২০২৪’-এর তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ মানুষ শহরে এবং ৬২ শতাংশ মানুষ গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেন। কিন্তু মোট চিকিৎসকের ৭৫ শতাংশ শহরাঞ্চলে এবং ২৫ শতাংশ গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত। অন্য দিকে মোট নার্সের ৭৫ শতাংশ শহরে এবং ২৫ শতাংশ গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত। আর মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের অর্ধেকের বেশি শহরে কর্মরত।

চিকিৎসকরা গ্রামাঞ্চলে থাকতে চান না এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু তার কোনো সমাধান হচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকরা যাতে থাকতে পারেন সে জন্য তাদের যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার সবই ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর চিকিৎসকরা সেখানে না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এমন মানুষের সংখ্যা অধিক যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের জন্য সরকারি চিকিৎসাসেবাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ইশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লোকবল সঙ্কট দূর করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ইশ্বরদীর মানুষের নির্বিঘœ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার পথ সুগম হবে।