নির্বাচন ঘিরে পাহাড়ে অস্থিরতার অপচেষ্টা, জননিরাপত্তায় শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, বিদেশের মাটিতে বসে দেশে উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে এখনই শক্ত অবস্থানে যেতে হবে সরকারকে। নইলে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশের এক-দশমাংশ ভূমি নিয়ে আমাদের পার্বত্য এলাকা। এখানে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল থাকলে এ জনপদ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে রাখতে পারত গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু অপার সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না, শুধু পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কারণে। পাহাড়ি শান্তিপ্রিয় মানুষদের ভয় দেখিয়ে কিংবা ভুল বুঝিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিজেদের আখের গোছাতে পার্বত্যাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে প্রতিনিয়ত অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো- আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পাহাড়কে ফের অশান্ত করতে নানা চক্রান্ত করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফের একটি অংশ। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে পাহাড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত দেশবিরোধী এসব সন্ত্রাসী। এতে সরাসরি মদদ দিচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত।

নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন বলছে, সীমান্তপথে ভারত থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এনে বিশাল মজুদ গড়েছে একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এসব অস্ত্রভাণ্ডার নিরাপদ রাখতে পাহাড়িদের আশ্রয়ে অবস্থান করছে সন্ত্রাসীরা। তবে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। এ জন্য বিভিন্ন জায়গায় অবান্তর অভিযোগ তুলে বিতর্কিত করতে চায় সেনাবাহিনীকে। ইতোমধ্যে সেনাক্যাম্পের কাজে বাধা দেয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ছাত্র-জনতা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি উষাতন চাকমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্মাছড়ি ইউনিয়নে সেনাক্যাম্প স্থাপনের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান। শুধু উষাতন চাকমা নন, ফেসবুকে শতাধিক পোস্টে নানা মিথ্যা রটিয়ে স্থানীয়দের উসকে দেয়া হয়। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিরাপত্তা টহল ও পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে।

ভারত সীমান্ত হয়ে অবৈধ অস্ত্র খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় প্রবেশ করে এবং বর্মাছড়িমুখ পাড়ায় মজুদ রাখা হয়। এখান থেকে পার্বত্য সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সমতলের অপরাধীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি হয়। এসব অস্ত্র দিয়ে সংঘটিত হচ্ছে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনা। সন্ত্রাসীরা পাহাড়ি জনপদের সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে।

খাগড়াছড়ি জেলার ল²ীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেসব এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান ও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউপিডিএফ ঠাণ্ডা মাথায় পাহাড় অশান্তের ছক আঁকছে। খাগড়াছড়িতে গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণে বিষয়টি স্পষ্ট। তাদের এ সশস্ত্র অপতৎপরতায় দীর্ঘ দিন ধরে নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো ফের অস্থিতিশীলতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সন্ত্রাসীরা যেন জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে সে জন্য সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়ানো দরকার।

বাস্তবতা হলো- ইউপিডিএফ অপকৌশলে সাধারণ পাহাড়িদের ধর্মীয় আবেগ উসকে দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে চায়; যাতে তাদের অস্ত্র ব্যবসা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়। লক্ষণীয়, অর্কিড চাকমা নামে এক ব্যক্তি ভারতে বসে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। হোয়াটসঅ্যাপে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, বিদেশের মাটিতে বসে দেশে উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে এখনই শক্ত অবস্থানে যেতে হবে সরকারকে। নইলে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।