কোটাব্যবস্থা বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে একদল সুবিধাভোগী তৈরি করেছে। রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে ক্ষমতাবানরা নিজেদের স্বার্থে এর অপব্যবহার করেছে, অন্যায় সুবিধা নিয়েছে। স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার সম্পূর্ণরূপে একটি গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়। চাপিয়ে দেয়া হয় ৮০ শতাংশ কোটা। তার প্রভাব সরকারি প্রশাসনে দীর্ঘমেয়াদে পড়েছে। দক্ষ ও মেধাবীদের বদলে দেশ পড়ে যায় অদক্ষ মেধাহীনদের কবলে। তারা দেশের চেয়ে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের স্বার্থ দেখেছে বেশি। কোটাসুবিধা নাতিপুতিদের পর্যন্ত চিরস্থায়ী করতে গিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এখনো কোটাব্যবস্থার সুবিধাবাদী নীতি থেকে দেশ রেহাই পায়নি। গত কয়েক দিন ধরে পোষ্যকোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যকোটা শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা সরকারের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর ওপর তারা পোষ্যকোটায় সন্তান ও নিকটাত্মীয়দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুবিধা পান। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যকোটা বাতিল করা হলেও নতুন করে বিভিন্ন নামে সেটি আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার’ নামে কোটা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে এক সেশনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪০ সন্তান ভর্তি হতে পারবে। এক্ষেত্রে পোষ্য হিসেবে শুধু এক সন্তান সুযোগ পাবে। আবার যে বিভাগে বাবা-মা চাকরি করেন সে বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না।
এদিকে পোষ্যকোটা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র ও শিক্ষকরা মুখোমুখি হয়েছেন। পোষ্যকোটা ফিরিয়ে আনায় ছাত্ররা তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ১০টি শর্ত দিয়ে পোষ্যকোটা ফিরিয়ে আনলেও ছাত্ররা তা মেনে নিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ পোষ্যকোটা স্থগিতের ঘোষণা দিলেও এর চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পোষ্যকোটা নিয়ে আগে থেকে সমালোচনা আছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তারা অনেকটাই সরকারের তরফ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র আবার বিশেষ এই সুবিধা করে দিচ্ছে। উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ এতে অন্যদের জন্য সীমিত হয়। আবার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে একটি শ্রেণীকে অলস অকর্মণ্য বানিয়ে ফেলা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রেখে আর সব কোটা বাতিল করার আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
পোষ্যকোটা নিয়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে একটি বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। এমনটি চলতে পারে না। একটি কেন্দ্রীয় সরকারি নিয়ম থাকা উচিত যা সব বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করবে। স্বায়ত্তশাসনের সুযোগে কর্তৃপক্ষ পোষ্যকোটার সুবিধা নিলে অসন্তোষ থেকে যাবে।
আওয়ামী লীগের সরকার কোনো যুক্তি ছাড়াই সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছিল। ছাত্র-জনতা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছে। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটাসুবিধা বাতিল করাই ন্যায়সঙ্গত। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ছাড়া কারো জন্য কোটাসুবিধা রাখার দরকার নেই।