নদীতে কচুরিপানা থাকলে নদী প্রবাহ হারিয়ে একসময় ভরাট হয়ে পড়ে। এতে ওই নদী মজা নদীতে পরিণত হয়। তখন প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদী খনন জরুরি হয়ে পড়ে। সহযোগী একটি দৈনিকের জয়পুরহাট সংবাদদাতার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জয়পুরহাটের চিরিনদী খননের তিন বছর যেতে না যেতে ফের ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কচুরিপানায় প্রায় ভরে গেছে নদীটি। এতে নদী খননের পর যে সুফল পাওয়ার আশা ছিল, তা পাচ্ছেন না নদীর দু’পারের মানুষ। মাত্র তিন বছরে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়পুরহাটের চিরিনদী ভরাট হওয়ার কথা নয়।
নদীতীরের বাসিন্দা ও নদী আন্দোলনের নেতারা মনে করছেন, অপরিকল্পিত খননে বালু ও মাটি নদীতে মিশে যাওয়া, বর্জ্য ফেলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারো ভরাট হচ্ছে এ নদী। তাই নদীর নাব্য টিকিয়ে রাখতে শুধু খনন করলে হবে না, এর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে চারটি নদী। এর মধ্যে আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার রয়েছে চিরিনদী। এটি শাখানদী হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি নদীর খননকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। নদী খননের প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বছর সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বাড়িয়ে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা, পুনর্খননের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করা, নৌচলাচলের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু চিরিনদীতে এসব বেশির ভাগ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, নদী খননে সারা বছর পানি থাকার আশা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে কোথাও পানি থাকছে, কোথাও থাকছে না। নদী খনন করার সময় বাঁধের ওপর রাখা মাটি আবারো নদীতে মিশে এর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী ভরে আছে কচুরিপানায়। কোথাও পানি থাকলেও ময়লার কারণে হয়ে পড়েছে ব্যবহার অযোগ্য। এতে দিন দিন নদীটি নাব্য হারিয়ে ফেলছে। নদী রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সচেতন মহলের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জয়পুরহাট জেলার সমন্বয়ক বলেন, ‘চিরিনদী খনন করা হয়েছে পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে। নদী খননের সময় মাটি ও বালু নদীর পাড়ের ওপর রাখা হয়েছিল। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবার নদীতে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো সুফল মিলছে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করে কোনো লাভ হয়নি। নদী রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।’
আসলে জয়পুরহাটের চিরিনদী অপরিকল্পিতভাবে খনন করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল পেতে হলে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। শুধু কোটি কোটি টাকা খরচ করলে হবে না। টাকা কাজে লাগছে কি না, তা দেখতে হবে।



