মেডিক্যাল অক্সিজেন আমাদের কতটা প্রয়োজন হতে পারে তা অনুধাবন করা গিয়েছিল করোনা মহামারীর সময়। তখন দেশে অক্সিজেনের অভাবে মানুষের মৃত্যু হয়েছে- এমন খবরও পাওয়া গেছে। মানুষ খাদ্য ও পানি ব্যতীত কয়েক দিন বাঁচতে পারলেও অক্সিজেন ছাড়া তার পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অক্সিজেন হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, যার কোনো বিকল্প নেই। এ দিকে অতি প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারও মেডিক্যাল অক্সিজেনকে ‘অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত শুরু করেছে। এটি নিঃসন্দেহে সরকারের ভালো পদক্ষেপ।
গত মঙ্গলবার রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক সম্মেলনে বলা হয়েছে, নিরাপদ অক্সিজেনের অভাবে ঝুঁকিতে কোটি মানুষ। দেশে স্থাপিত ৯৯টি অক্সিজেন প্ল্যান্টের মধ্যে সচল মাত্র ২৯টি, বাকি ৭০টি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সম্মেলনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩৭৪ মিলিয়ন মানুষের মেডিক্যাল অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। যাদের ৮২ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করেন। অথচ এসব দেশে অক্সিজেন থেরাপি পান মাত্র ৩০ শতাংশ রোগী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ সীমিত, এমনকি অনেক স্থাপনা অকার্যকর।
অক্সিজেনের প্রয়োজন কখন হবে তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু প্রয়োজনের সময় না পেলে যে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে সেটি তো অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে স্থাপিত ১০১টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও ভিআইই ট্যাংকের অনেকগুলো অকার্যকর। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, প্রশিক্ষিত কর্মীর সঙ্কট এবং দুর্বল বিতরণব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। এ ক্ষেত্রে পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো- বিদ্যমান প্ল্যান্টগুলোতে দক্ষ জনবল ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা, বায়োমেডিক্যাল ক্যাডার গঠন, অক্সিজেনকে ‘অত্যাবশ্যকীয় জনস্বাস্থ্য পরিষেবা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া, একটি জাতীয় রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং স্থিতিশীল মিশ্র সরবরাহ মডেল তৈরি করা।
দেশে ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এদের প্রায় দুই লাখ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর অক্সিজেন থেরাপি তাদের জীবনমান বদলে দেয়; কিন্তু বাংলাদেশে তাদের অক্সিজেন দেয়ার কাজই শুরু করা যায়নি।
অক্সিজেন সঙ্কটের ঝুঁকির সাথে এর দাম নিয়েও সমস্যা রয়েছে। একেক হাসপাতালে একেক রকম দাম নির্ধারণ করা হয়। ফলে বিপাকে পরেন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের সব পথ যেমন অবারিত রাখতে হবে তেমনি অক্সিজেন গ্রহণকারীরা যেন তা সুলভ মূল্যে পায় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যায় বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের সমস্যাগুলো যেভাবে স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন ছিল তা হয়নি; বরং আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা পুঁজি করে পাশের দেশসহ অনেক দেশেই রমরমাভাবে চিকিৎসাবাণিজ্য চলছে।
রোগীর মৃত্যুর পর অক্সিজেনের সরবরাহ কোনো কাজে আসবে না। রোগী বেঁচে থাকতেই তার প্রয়োজনীয় অক্সিজন সরবরাহ নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এ জন্য যেসব অক্সিজেন প্ল্যান্ট অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেগুলো দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।