মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি চিকিৎসা। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যের কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। অর্থাভাবে অনেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারেন না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেশে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। এটি দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতার দুর্বলতম দিক। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে এসে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার আরেকটি দুর্বল দিক উন্মোচিত হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ও অপব্যবহার। অথচ সবার জানা, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক অপরিহার্য। এটি জটিল-কঠিন রোগ নিরাময় সহজ করেছে। তবে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ ইচ্ছেমতো কেউ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিককে বলা হয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। কিন্তু যথেচ্ছ ব্যবহারে এটি কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য নতুন আরেক ঝুঁকিতে পড়েছে। অবস্থা এতটাই নাজুক যে, ৪১ শতাংশ ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যবহার দিন দিন এ সঙ্কট আরো গভীর করে তুলেছে। অথচ মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর গত সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি।
আইইডিসিআর ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে ‘জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্স’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মূল লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত অণুজীব বা প্যাথোজেনগুলোর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) অবস্থা পর্যবেক্ষণে শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে এ আহ্বান পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করেন। কারণ বিশেষজ্ঞরা বারবার করে বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক যত কম ব্যবহার করা যাবে, এটি তত বেশি কার্যকর থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, এখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) মোকাবেলায় কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এজন্য দ্রুত জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষ যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেদের ইচ্ছেমতো ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করতে না পারেন, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্য দিকে ফার্মেসি ব্যবসায়ীরাও যাতে সামান্য লাভের আশায় চিকিৎসাপত্র ছাড়া কারো কাছে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করতে পারেন, তার জন্য নজরদারি দরকার। তবে এ কথাও স্মরণে রাখতে হবে যে, শুধু আইন করে সুফল পাওয়া যাবে না। এ জন্য খুচরা ওষুধ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্যে এর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর অনিবার্য পরিণতি হলো, দেশের চিকিৎসা খাতকে গুরুতর সঙ্কটে পড়তে হবে। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সবাইকে দায়িত্বশীলতার সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।



