প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন, বৈষম্য সৃষ্টির কেন এ উদ্যোগ

আমরা মনে করি, সরকার দেশের পঞ্চম শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আগে যেখানে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেত, এখন নিয়ম করে তা শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের। যদিও উচ্চ আদালতের রায়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

গতকাল নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বৃত্তির নাম পরিবর্তন করে এখন নাম দেয়া হয়েছে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী মেধা যাচাই মূল্যায়ন’। সরকার তথা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি চক্র কৌশলে বেসরকারি ও তথা কিন্ডারগার্টেনে অধ্যয়নরত পঞ্চম শ্রেণীর ছয় লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষার এ প্রতিযোগিতা থেকে বাদ রাখার এই ষড়যন্ত্র করছে। যদিও গত ৩ নভেম্বর উচ্চ আদালত বেসরকারি এবং কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদেরও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে সরকারকে নির্দেশনা দিয়ে আদেশ দিয়েছেন।

চতুর ইংরেজ জাতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রখ্যাত নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ তার ‘দ্য ম্যান অব ডেস্টিনি’ নাটকে লিখেছেন, ‘একজন ইংরেজ খুঁজে পাবে না যে ভুলভাবে কোনোকিছু করে। সবকিছু সে করে নীতি মেনে। সে তোমার সাথে যুদ্ধ করবে দেশপ্রেমের নীতি মেনে; তোমার ওপর ডাকাতি করবে ব্যবসায়িক নীতি মেনে; সে তোমাকে দাসে পরিণত করবে ঔপনিবেশিক নীতি মেনে; তোমার ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করবে পৌরুষের নীতি মেনে’।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যারা নিয়ম করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা শুধু সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন; তারা চতুরতার সাথে ইংরেজদের সেই নীতিই যেন অনুসরণ করেছেন।

যেখানে আদালত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে এককভাবে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা উচ্চ আদালতকে অবজ্ঞার শামিল ছাড়া আর কিছু নয়।

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আমাদের শিশু শিক্ষার্থীদের একটি কাক্সিক্ষত পরীক্ষা। দীর্ঘ দিন থেকে সরকারি-বেসরকারি সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এতে অংশ নিয়ে আসছে। কিন্তু এখন কী এমন হলো যে, উল্লিখিত পরীক্ষায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করতে হবে?

পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য মেধা যাচাই, মূল্যায়ন ও শিখনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা। বাস্তবে আমাদের দেশে বর্তমানে এসব উদ্দেশ্য প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত হচ্ছে না। এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা প্রকারান্তরে এই পরীক্ষার উদ্দেশ্যই ব্যাহত করা হবে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছয় লাখ শিশু শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করে কেবলমাত্র সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ জনবিরোধী। এটি নতুন করে ভিন্ন আঙ্গিকে বৈষম্য সৃষ্টির অপচেষ্টাও বটে। আমরা মনে করি, সরকার দেশের পঞ্চম শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।