একটি সেতু সংস্কারে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। অর্ধযুগ ধরে এতে কাজ করা হচ্ছে। তারপরও চলাচলের উপযুক্ত একটি সেতু এলাকাবাসী পায়নি।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবর অনুযায়ী, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় এই আশ্চর্যজনক সংস্কার চলছে। শুক্তাগড় ইউনিয়নের তালুকদারহাট ও পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী সেতুটি ছয় বছর আগে বালুবোঝাই কার্গোর আঘাতে ভেঙে যায়। সংশ্লিষ্ট দফতর সেতুটির সংস্কার নিয়ে প্রথমে গড়িমসি করে। চলাচলে স্থানীয়রা পড়ে যান বিপাকে। তখন বাধ্য হয়ে দুই উপজেলার জনগণের চলাচলের জন্য সেতুর উপর সাঁকো তৈরি করা হয়। একপর্যায়ে সাঁকোটিও ভেঙে যাওয়ায় দুই উপজেলার কয়েক হাজার বাসিন্দা অনেকটা বন্দী হয়ে যান।
ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের মধ্যে বয়ে যাওয়া ভারানী খালের উপরের এই সেতুটি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়। খালের পূর্বপাড়ে আছে কাঠিপাড়ার তালুকদারহাট, হাফেজিয়া দাখিল মাদরাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পশ্চিমে আছে একটি হাইস্কুল, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দু’টি কলেজসহ দু’পাড়ে ডজনখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় দফতর তা সংস্কার না করায় ছয় বছর আগেই তারা চলাচলের জন্য সাঁকো নির্মাণ করেন। পুরনো হওয়ায় বাঁশের খুঁটি পচে গিয়ে সাঁকোটিও কয়েক দিন আগে ভেঙে যায়। ছয় বছর আগে সেতু ভেঙে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর উদ্যোগে সেতুর মাঝখানে সাঁকো তৈরি করা হয়। শিক্ষার্থীরা সেই সাঁকো ব্যবহার করে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করত। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় তারা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারছে না। ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা, এই সময়ে প্রতিষ্ঠানে আসতে না পারলে শিক্ষার্থীদের বেশি ক্ষতি হবে।
সেতুটি ওই এলাকার দুই উপজেলার মানুষের একমাত্র সংযোগ স্থাপনকারী সেতু। তিন কিলোমিটারের মধ্যে থাকা একমাত্র হাটে সপ্তাহে দুদিন দুই উপজেলার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাবেচা করেন। সব মিলিয়ে বেশ কয়েক হাজার মানুষ এ জন্য বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে জানা যাচ্ছে, বরাদ্দের অভাবে সেতুটি সংস্কার করা যায়নি। আয়রন সেতুটির জন্য নতুন করে ১০০ মিটারের কম প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে আশা করা হলেও দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে বরাদ্দের অভাব ও লোকবল সঙ্কটে কাজ বিলম্ব হয়। এই সেতুর ক্ষেত্রেও এমনটি হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে উপরে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘ সময় পার হলেও কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। সেতুর প্রয়োজনীয় সংস্কারে এলাকাবাসী সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। আর বিলম্ব না করে এলাকাবাসীর অসুবিধা দূর করা হোক।



