জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক ও অন্যান্য সঙ্কট দূর করুন

নতুন গড়ে ওঠা সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর তাদের প্রয়োজনীয় সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। দেশে যথাযথ সুযোগের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের প্রত্যাশিত শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। ফলে কর্মজীবনে তাদের নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। গত সরকারের আমলে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে যতটা না মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা বিবেচনা করা হয়েছে, তার থেকেও বেশি প্রাধান্য পেয়েছে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য। ফলে রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের পরিবেশ অধরাই থেকে গেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের থাকার হল, ল্যাব ও গড়ে উঠেনি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস। এমনই একটি বিশ্ববিদ্যালয় জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-জাবিপ্রবি।

গত শনিবার নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠার আট বছর পেরুলেও জাবিপ্রবি এখনো কোনো অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি বিভাগ ও ছয়টি অনুষদে দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান পুরোপুরি নির্ভর করছে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের ওপর। বর্তমানে জাবিপ্রবিতে শিক্ষক রয়েছেন ৫২ জন। এর মধ্যে ১০ জন শিক্ষাছুটিতে, একজন প্রভাষক সাময়িক বহিষ্কৃত ও একজন সহকারী অধ্যাপক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ক্লাস নেয়া থেকে বিরত। ফলে শুধু ৪০ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চা, জ্ঞানবিতরণ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্র। কিন্তু সেখানে যদি প্রয়োজনীয় শিক্ষকই না থাকে তাহলে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে কিভাবে?

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সঙ্কটও প্রকট। শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবরেটরির ঘাটতি চরমে, কোনো আধুনিক সরঞ্জামও নেই। নেই লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। আবাসন সঙ্কটও ভয়াবহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে মাত্র দু’টি আবাসিক হল- যার একটিতে মেয়েদের জন্য ২৫০ সিট এবং অন্যটিতে ছেলেদের জন্য ১২০ সিট রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে দূর থেকে পড়াশোনা করতে আসেন।

নতুন করে গড়ে ওঠা জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একই সমস্যা আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। বর্তমানে দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টিরই নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। এগুলোর মধ্যে ১৭টির জন্য এখনো কোনো ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা ভবন বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সঙ্কটের জেরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম, ল্যাব, লাইব্রেরি এবং আবাসন সুবিধার মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা ৩০ শতাংশের নিচে।

দেশে আদৌ এত বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সবার জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে যে বিষয়ে সবাই একমত, তা হলো- সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা। মানহীন শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্টিফিকেট কোনো কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে সাফল্যের বদলে দুর্ভোগও বয়ে আনতে পারে।

নতুন গড়ে ওঠা সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর তাদের প্রয়োজনীয় সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা কোনোভাবেই কাম্য নয়।