স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি নতুন স্বীকৃতি, বেশি কিছু আশা করা যায় কি

আন্তর্জাতিক একজন বিশ্লেষক বলেছেন, যদি বিশ্বের প্রতিটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তবু ইসরাইলি দখলদারিত্ব ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। তবে এটি ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’কে নতুন করে গুরুত্ব দিতে এবং শান্তির প্রচেষ্টায় নতুন করে আশার সঞ্চার করতে পারে।

ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রাক্কালে এ তিন দেশ স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়। শিগগির ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগালসহ আরো কয়েকটি দেশ এমন স্বীকৃতি দিতে পারে। এতে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে কিছুটা উজ্জীবিত করেছে। আশাবাদী করেছে, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন এবার বাস্তব রূপ নিতে পারে। বলা যায়, গোটা বিশ্বের নজর এখন ফিলিস্তিনের দিকে। এর সম্ভাব্য ফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এ স্বীকৃতি দীর্ঘ দিনের কূটনৈতিক জটিলতা ও মানবিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে এক সাহসী পদক্ষেপ, একটি ঐতিহাসিক বাঁকবদল।

দেখার বিষয়, স্বীকৃতি এমন সময়ে এলো, যখন গাজায় ইসরাইল নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে দুই বছরে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, লাখো মানুষকে পঙ্গু বা আহত করেছে। খাদ্য, পানীয়, ওষুধ এবং জীবন ধারণের উপকরণ বন্ধ করে দিয়ে ২২ লাখ মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। পশ্চিমা দুনিয়া এ দৃশ্য নীরবে উপভোগ করেছে। যখন পাশ্চাত্যে তরুণসমাজ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার হতে শুরু করেছে; তখন ফিলিস্তিনিদের বর্তমান দুর্ভাগ্যের জন্য মুখ্যত দায়ী ব্রিটেন তার পুরনো উপনিবেশ কানাডা-অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে স্বীকৃতির আয়োজন করেছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে স্বাগত জানিয়েছেন। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করেছে।

আমরা জানি, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে বাস্তবে কিছু নেই। পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের অধীনে যে ভূখণ্ড তা স্বাধীন বলা যায় না। তবু রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের ১৪৭টি দেশ এ ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে এর কূটনৈতিক মিশন আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই, সার্বভৌমত্বও নেই। এ পরিস্থিতিতে কয়েকটি দেশের স্বীকৃতিকে অনেকে প্রতীকী উল্লেখ করছেন। আমাদের ধারণা, ফিলিস্তিনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও সামান্য ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ নতুন স্বীকৃতি দেয়া তিনটি দেশ জি-৭-এর সদস্য। এদের কূটনৈতিক গুরুত্ব আছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের স্বীকৃতির পর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চারটির সমর্থন পাবে ফিলিস্তিন। চীন ও রাশিয়া অনেক আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আইনগত দিক থেকে এটি অর্থবহ। এতে ইসরাইলের ত্রাণকর্তা যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা চাপে পড়তে পারে।

এ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ দেখি না। স্বীকৃতিগুলো আসছে অবমাননাকর শর্তাধীনে। আবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের যে সীমানা ১৯৬৭ সালের আগে নির্ধারিত ছিল, তার কোনো উল্লেখ কোথাও থাকছে না। নির্ধারিত ছিল পূর্ব জেরুসালেম হবে ফিলিস্তিনের রাজধানী। সে কথা ঘুণাক্ষরেও উঠছে না। এটি ’৬৭ সালে ইসরাইলের দখল করা পুরো ভূখণ্ড সে দেশের অংশ হিসেবে মেনে নেয়ার একধরনের অঘোষিত স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক একজন বিশ্লেষক বলেছেন, যদি বিশ্বের প্রতিটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তবু ইসরাইলি দখলদারিত্ব ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। তবে এটি ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’কে নতুন করে গুরুত্ব দিতে এবং শান্তির প্রচেষ্টায় নতুন করে আশার সঞ্চার করতে পারে।